দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ যাতে আরও বিস্তৃত হতে না পারে, সেজন্য এ সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা আগেও নানা পরামর্শ ও তাগিদ দিয়েছি। স্বস্তির বিষয়, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের তৎপরতাও আগের তুলনায় বেড়েছে। বিশেষত মার্চের ৮ তারিখে প্রথমবারের মতো তিনজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর সচেতনতা ও সতর্কতার মাত্রা বেড়েছে বহুগুণে। নাগরিকদের দাবির মুখে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্বতপ্রণোদিতভাবে বাতিল করা হয়েছে মুজিববর্ষের জনসমাগমমূলক আয়োজন। হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে এর চিকিৎসা প্রস্তুতি। আমরা মনে করি, এখন জোর দিতে হবে বিদেশফেরতদের সংগনিরোধ বা কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থায়। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় রাষ্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় সংগনিরোধ সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে যদি প্রবাস থেকে ফেরা বাংলাদেশিরা বাড়িতেই পারিবারিক উদ্যোগে বা স্বেচ্ছা সংগনিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন, তা হবে সর্বোত্তম ব্যবস্থা। ভুলে যাওয়া চলবে না, মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশে যে ১০ জন করোনাভাইরাস সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, তাদের সবাই প্রবাসফেরত বা প্রবাসফেরতদের সংস্পর্শে এসেছিলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মতো দেশে ফেরার পর অন্তত দুই সপ্তাহের সংগনিরোধ ব্যবস্থা করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে সহায়ক হতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত বেশিরভাগ প্রবাসফেরতই দৃশ্যত এই নিয়ম মানতে চাইছেন না। আমরা দেখেছি, ইতালির মতো উচ্চ করোনা ঝুঁকির দেশ থেকে ফিরে একজন নাগরিক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বন্ধুর আবাসে চলে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে দলবলে সাজেকে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। প্রবাসফেরতরা কিভাবে স্বাভাবিক জনসংস্পর্শে আসছেন, সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার চিত্র ফুটে উঠছে। এ প্রবণতা শূন্যে নামিয়ে আনার বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ ও দুর্বল জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দেশে করোনার মতো ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। কিন্তু একই সঙ্গে আবারও বলতে চাই, এ জন্য আতঙ্ক কোনো সমাধান নয়। বরং সচেতনতা ও সতর্কতাই এ ধরনের ভাইরাসের উত্তম জবাব। আমরা দেখতে চাইবো- সচেতনতামূলক কর্মসূচির পাশাপাশি প্রবাসফেরতদের সংগনিরোধ নিশ্চিত করতে প্রশাসন ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার উদ্যোগী হয়েছে। বস্তুত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে প্রয়োজনে আইন প্রয়োগের নির্দেশনা দিয়েছেন। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় এক ব্যক্তিকে এ জন্য জরিমানাও করা হয়েছে। আমরা দেখতে চাইবো, সবাই এ ব্যাপারে আন্তরিক সহযোগিতা করবে। তবে আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে যাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে না পড়ে, কেউ যাতে সামাজিক হেনস্তার শিকার না হন, তাও নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও এগিয়ে আসতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হবে। ইতোমধ্যে এর প্রতিষেধক আবিস্কারে যে অগ্রগতির কথা শোনা যাচ্ছে, তা দ্রুততর হবে। সবাই মিলে সামান্য কিছু দিন সংগনিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে এই দুর্যোগ থেকে আমরা নিশ্চয়ই মুক্তি পাবো।