স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার প্রথম বার্ষিক সাধারণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা জজ আদালত ভবনের সম্মেলনকক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিজেএম কোর্টের নাজির ওসমান গণি। সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জজ কোর্টের সেরেস্তাদার মাসুদুজ্জামান। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অধীন বিচার বিভাগের কর্মচারী। নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর পৃথকীকরণ করা হয়। বিচার বিভাগের কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও আমাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীর সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়। যেখানে ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার কর্তৃক বিজ্ঞ বিচারকদের জন্য ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেল’ নামে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রদান করা হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমরা বিচার কার্যে মাননীয় বিচারক মহোদয়গণের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে কর্ম সম্পাদন করা সত্ত্বেও স্বতন্ত্র বেতন স্কেলসহ সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত এবং বিচার বিভাগে চাকরি করা সত্ত্বেও জনপ্রশাসনের কর্মচারী হিসেবে আমাদের পরিচিতি চরম বঞ্চনা ও পীড়াদায়ক। পক্ষান্তরে বিজ্ঞ বিচারকগণ স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর পাশাপাশি দেওয়ানি আদালতে অবকাশকালীন সময় (ডিসেম্বর মাস) ফৌজদারী আদালতে দায়িত্ব পালন করার জন্য এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমান বেতনপ্রাপ্ত হন এবং প্রতি মাসেই বিচারিক ভাতা হিসেবে মূল বেতনের ৩০% প্রাপ্ত হন। কিন্তু বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারীগণকে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেল এর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমনকি অবকাশকালীন ছুটিতে দায়িত্ব পালন ভাতা ও বিচারিক সহায়তা ভাতাও প্রদান করা হচ্ছে না।
সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি তার বক্তবে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতা মরহুম শেখ লুৎফর রহমান, সেরেস্তাদার পদে মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার আদালতে চাকরি করতেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগামী ১৭ মার্চ জন্মশতবার্ষিকী যথাযথ মর্যদায় পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করে তার বক্তব্যে আরও বলেন, আদালতের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ বিচারকাজ করেন, অধীনস্থ কর্মচারীগণ বিচারকে বিচারকাজে সহায়তা করেন। আদালতের বিভিন্ন বিভাগ/শাখার ব্যবস্থাপনা তত্ত্বাবধানসহ আদালতের আদেশ মোতাবেক অন্যান্য কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে অধীনস্থ’ কর্মচারীগণ বিচার বিভাগে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আদালতে কর্মচারীরা বিচারক না হলেও বিচারিক কাজের অতি আবশ্যক সহায়ক কর্মচারী। যা অনস্বিকার্য। সরকারের অন্য যে কোনো বিভাগের চেয়ে বিচার বিভাগের কর্মচারীগণ অধিক পরিশ্রম করেন, তা যে কোনো বিবেকবান মানুষ আদালতে গিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করলে বুঝতে পারবেন। প্রতিদিনের কাজ শেষ করতে সন্ধ্যা রাত এমনকি ছুটির দিনেও কাজ করতে হয়। অধঃস্তন আদালতের কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বর্তমান জনবান্ধব সরকারের নিকট বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের দাবি হলো। ১। অধঃস্তন আদালতের কর্মচারীদেরকে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন ভাতা প্রদান। ২। সকল ব্লক পদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদসৃজন পূর্বক মহামান্য হাইকোর্ট ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে প্রতি ৫ বৎসর অন্তর অন্তর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদোন্নতি ও উচ্চতর গ্রেড প্রদানের ব্যবস্থা করা ও ৩। অধঃস্তন সকল আদালতের কর্মচারীদের নিয়োগ বিধি সংশোধন করতঃ এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন জজ কোর্টের নাজির শ্যামল কুমার সাহা, সেরেস্তাদার মনিরুজ্জামান, নুরুল হক, আব্দুল্লাহ আলমামুন, স্টেনোগ্রাফার রাশেদুজ্জামান, সহকারী সেরেস্তা সোহরাব উদ্দীন, পেশকার জহুরুল ইসলাম, সিজেএম কোর্টের স্টেনোগ্রাফার সুবাস কুমার, কম্পিউটার অপারেটর আব্দুল্লাহ আলমামুন মজিদ প্রমুখ।