আকস্মিক দু’দেশের ইমিগ্রেশন থেকে যাত্রী যাওয়া-আসা বন্ধ : সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে দু’পারে আটকে পড়া কয়েকশ যাত্রী
বখতিয়ার হোসেন বকুল: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা চোকপোস্ট সীমান্তে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ ও সচেতনতায় কাজ করছে ১৫ সদস্যের মেডিকেল টিম। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তৃক গত ২০ জানুয়ারি মেডিকেল অফিসার ডা. তানভীর মো. আসিফ মুজতবাকে প্রধান করে ৬ জন মেডিকেল অফিসার, ৭ জন সেকমো, একজন সেনেটারি ইন্সপেক্টর এবং একজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদশর্কের সমন্বয়ে ১৫ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। মেডিকেল টিম গঠনের পর গত ২৬ জানুয়ারি থেকে ভারত ভ্রমণকারী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন তারা। দু-একদিনের মধ্যেই বসানো হবে ডিজিটাল অটো স্ক্যানার।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দুপুর ২টার পর থেকে আকস্মিক বিনা নোটিশে ভারতে যাত্রী যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে দর্শনা চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন বিভাগ। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনা চেকপোস্টে আসা ভারতগামী যাত্রীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। বেশকিছু যাত্রী ভারতীয় ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে আটকা পড়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে দর্শনা চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ইনচার্জ এসআই রাশেদুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি সময়ে যে সমস্ত যাত্রীরা চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ভ্রমণ করেছেন তাদের ভারতে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সর্বনিম্ন ২৪ থেকে ২৮ দিন দেশে অবস্থান করার নিয়ম রয়েছে। ১১ মার্চ ফেরত পাঠানো ওই ভারতীয় নাগরিক মাত্র ২১দিন আগে ওমান ভ্রমণ করেছেন। সে কারণেই তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি। যাত্রী আসা-যাওয়া বন্ধ ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, বেলা ১২ টার পর বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের সময় বেশকিছু যাত্রীকে ফেরত দেয় ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দুপুর ২টার পর থেকে ভারতে যাত্রী যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। কবে নাগাদ ভিসা চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনও পর্যন্ত কোনো চিঠিপত্র হাতে পাইনি। তবে একটি সূত্র বলেছে ১৩ মার্চ শুক্রবার থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ভিসা বন্ধ করেছে ভারতীয় সরকার।
মেডিকেল টিমের প্রধান দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. তানভীর মো. আসিফ মুজতবা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সতর্কতা জারী করা হয়েছে। আমরা ২৬ জানুয়ারি থেকে শুধুমাত্র ভারত থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মেডিকেল অফিসার ডা. তরিকুল ইসলাম, ডা. অমিত কুমার বিশ্বাস, ডা. শাকিল আরসালান, ডা. মর্তূজা আহসান, সেনেটারি ইন্সপেক্টর জামাত আলী, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ড. সাইফুল ইসলাম, ডা. রফিকুজ্জামান, ডা. শামীম আহমেদ, ডা. রোকনুজ্জামান, ডা. আক্তারুজ্জামান, ডা. ওয়াশিম আলী, ডা. সোহরাব হোসেন এবং সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এই ১৫ জনের মেডিকেল টিম পলাক্রমে দায়িত্ব পালন করছে। গত ২৬ জানুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত হ্যান্ডহেল্ড থার্মাল স্ক্যানার মেশিন দিয়ে সর্বমোট ২৮ হাজার ৬শ ৭৬ জন যাত্রীর করোনাভাইরাস স্ক্রিনিং সংক্রান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের নাম, বয়স, পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, জ্বর-কাঁশি, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট আছে কি-না; সম্প্রতি চীনে ভ্রমণ করেছেন কি-না, ভারতে কোনো পশু-পাখির মার্কেট ভ্রমণ করেছেন, কোনো হাঁস-মুরগীর মার্কেটে গিয়েছেন, কোনো কনসার্টে গিয়েছেন, কোনো হাসপাতালে গিয়েছেন বা করোনা ভাইরাসের উপসর্গ আছে এমন কোনো ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে কি না এ রকম ২৩ ধরণের তথ্য নেয়া হচ্ছে। গত ২৬ জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়নি। তবে গত ১১ মার্চ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় এক নাগরিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল শুভ জানান, দর্শনা চেকপোস্টে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ ও সচেতনতায় কাজ করছে ১৫ সদস্যের মেডিকেল টিম। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত মেডিকেল টিম ভারত থেকে যারা এদেশে আসছেন তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। সম্প্রতি চীন ও পাশ^বর্তী দেশ ভারতে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় এ বন্দর দিয়ে ভারত ভ্রমণকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দর্শনা চেকপোস্টে এ পর্যন্ত ৩টি হ্যান্ডহেল্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে একটি ডিজিটাল অটোস্ক্যানার মেশিন প্রদান করেছে। দুই-একদিনের মধ্যেই তা বসানো হবে বলেও জানান তিনি।