প্রাণ নিয়ে দিল্লি ছেড়ে পালাচ্ছেন মুসলিমরা

দল্লিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮ : জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মুসলমানদের ওপর চালানো সহিংসতায় লাশের মিছিল বড় হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির দাঙ্গাকবলিত এলাকা থেকে একের পর এক লাশ বেরিয়ে আসছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চার দিনে ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দিল্লির এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
এদিকে, দিল্লির দাঙ্গার আগুন থেকে প্রাণে বাঁচতে দলে দলে রাজধানী ছাড়ছেন মুসলিমরা। দিল্লির খাজুরি খাস ও মৌজপুর এখন খাঁ খাঁ করছে। লোটা কম্বল নিয়ে পালাচ্ছেন শত শত মানুষ। গত রোববার থেকে টানা সহিংসার ঘটনার পর খাজুরি খাস, মৌজপুর বাবরপুর, ভাগীরথী বিহারের মুসলিম এলাকাগুলোতে শুধু কাকপক্ষি ছাড়া কেউ নেই। আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, শ্মশানের চেহারা নিয়েছে এলাকাগুলো। এই কাহিনী শুধু খাজুরি খাসের নয়। মৌজপুর বাবরপুর, ভাগীরথী বিহার, সর্বত্রই ছবিটা এক।
অপরদিকে, দিল্লিতে মুসলমানদের ওপর চালানো সহিংসতার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে সমমনা কয়েকটি ইসলামিক দল। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে এ কর্মসূচি পালিত হবে। এতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগরীর আমির আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী নেতৃত্ব দিবেন। খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে জমিয়ত কার্যালয়ে ছয়টি ইসলামি দলের নেতারা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বিক্ষোভ মিছিলের সিদ্ধান্ত হয়।
খবরে বলা হয়, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভজনপুরা, মৌজপুর, কারাওয়ালনগর, মুস্তাফাবাদসহ কয়েকটি এলাকা বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। মুস্তাফাবাদে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) বিরোধীদের ওপর এসিড হামলা করা হয়েছে। এতে চারজন দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফর চলাকালে দিল্লিতে সিএএ সমর্থক ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি মিছিল থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে তা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় রূপ নেয়। বুধবার রাতে মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভজনপুরা, মৌজপুর ও কারাওয়ালনগরে অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার গগন বিহার-জোহরিপুর এলাকার একটি ড্রেন থেকে দুটি লাশ পাওয়া যায়। পেট্রলবোমা ছোড়া, গাড়ি জ্বালিয়ে তা-বের পাশাপাশি এবার এসিড হামলার পথে নেমেছে বিক্ষোভকারীরা। মুস্তাফাবাদের অনেক জায়গায় এসিড হামলার খবর পাওয়া গেছে। এসিডে অনেকের চোখ-মুখ, গোটা শরীর ঝলসে দেয়া হয়েছে।
দিল্লির তেগবাহাদুর হাসপাতালে এসিড ক্ষত নিয়ে ভর্তি অনেকে। এসিড হামলায় চারজন হারিয়েছেন দৃষ্টশক্তি। জ্বালাপোড়া ক্ষত নিয়ে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। খুরশিদ নামে একজনের দুই চোখই নষ্ট হয়েছে। দুই চোখসহ পুরো মুখ ঝলসে গেছে ওয়াকিলের। জাফরাবাদ-মৌজপুরে এখন শ্মশানের নীরবতা বিরাজ করছে। মুস্তাফাবাদের গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতালে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। গুলিবিদ্ধ ৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া এলএনজেপি হাসপাতালে দুইজন এবং জগ পরবেশ চন্দ্র হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
মৌজপুরের দোকানের মালিক কোন ধর্মের তা দেখেই আগুন লাগানো হয়েছে। এ পাড়ায় ধর্মের জোরে যাদের দোকান বেঁচেছে, অন্যগলিতে সেই ধর্মের জেরেই দোকান পুড়েছে। জাফরাবাদের এক বাসিন্দা বলেন, ‘ভেতরের মহল্লায় অশান্তি চলছে। কোথায় কতজনের দেহ পড়ে রয়েছে কেউ জানে না। পুলিশ এখনও ঢুকতে পারেনি ভেতরে।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস নিবিড়ভাবে দিল্লি পরিস্থিতি নজরে রেখেছেন। বিক্ষোভকারীদেরকে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে দেয়া এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সংযত থাকা উচিত- এ বিষয়টির ওপরই গুতেরেস জোর দিচ্ছেন। সেইসঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব শান্ত পরিবেশ এবং স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা জরুরি বলেও গুতেরেস মত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র।