সংসদ অধিবেশনে উপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’কে নিয়ে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দলীয় সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে বলেছেন, মুজিববর্ষে প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকায় কর্মসূচি নিতে হবে। এক্ষেত্রে গৃহহীনদের আবাসন নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে মুজিববর্ষের নামে যাতে চাঁদাবাজি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের আগে কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সংসদ সদস্য জানিয়েছেন।
তারা আরও জানান, সংসদ অধিবেশনে দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের উপস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমি তো সংসদ অধিবেশনে নিয়মিত উপস্থিত থাকি। আপনারা পারবেন না কেন? মন্ত্রীরা যেন সংসদ চলাকালীন বাইরের প্রোগ্রাম নিরুসাহিত করেন। অধিবেশন চলাকলে বাইরের প্রোগ্রাম যত কম করা যায়, তত ভালো। বিশেষ করে আমার পেছনের আসনগুলোতে যারা বসেন তাদের উপস্থিতি যদি যথাযথ না হয়, তাহলে সেখান থেকে আসন পরিবর্তন করে দূরবর্তি জায়গায় দেয়া হবে। যাতে অধিবেশন কক্ষ খালি না দেখা যায়। খালি দেখা গেলে ‘সংসদের প্রতি এমপিদের মনোযোগ নেই’- এমন বার্তা বাইরে যাবে। তাই সকলকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
সরকারি দলের নেতা শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সংসদ অধিবেশন ও মুজিব বর্ষ উদযাপনসহ চলমান অন্যান্য ইস্যুতে দলীয় এমপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রধান হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, এ কে এম শামীম ওসমান, মাজহারুল হক প্রধান, মৃণাল কান্তি দাসসহ ১৭জন সংসদ সদস্য বক্তৃতা করেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান নিয়ে কেউ যেন অতি উৎসাহী হয়ে লম্ফ-ঝম্ফ না করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সে বিষয়টি সকলকে মনে রাখতে হবে। তখন বঙ্গবন্ধুর লাশ নেয়ার কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই সকল বিভেদ ভুলে দলকে সংগঠিত করতে হবে। দলীয় এমপিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আগামী ২২ ও ২৩ মার্চ সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসবে। সেখানে যারা বক্তব্য রাখতে চান, আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে তা স্পিকারকে অবহিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আগামী ১৯ মার্চ সংসদ চত্বরে শিশুমেলা অনুষ্ঠিত হবে। সেই মেলায় সকল এমপিদের উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনাও দেন তিনি।
মুজিববর্ষ উদযাপনে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির অর্থ দিয়ে যেন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরি করা না হয়। এক্ষেত্রে খাস জমিতে গৃহ নির্মাণের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা চাই মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, কেউ যেন অতি উৎসাহী হয়ে যত্রতত্র বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ না করেন। ম্যুরাল তৈরি করতে চাইলে নিয়ম মেনেই করতে হবে। ব্যানার পোস্টার ও অন্যান্য ক্ষেত্রে মুজিববর্ষের লোগো ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। জাতীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী লোগো ব্যবহার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জানান, মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের রাজাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আরো জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবো। এটি যাতে পৃথিবীর সকল দেশের সংসদের স্পিকারের নিকট শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে পৌঁছানো যায়, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
একাধিক সংসদ সদস্য নিশ্চিত করেছেন সংসদ নেতা চিফ হুইপ ও হুইপদের উদ্দেশ্যে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, সংসদ অধিবেশনে এমপি-মন্ত্রীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য চিফ হুইপ ও হুইপদের যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিশেষ করে তার (প্রধানমন্ত্রী) পেছনের চেয়ারগুলো যেন খালি না দেখায়। সংসদে উপস্থিত থাকতে পারেন না এমন এমপিদের আসন দূরে দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনাও দেন তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে শেষ হওয়া সংসদ অধিবেশনে মন্ত্রী-এমপিদের অনুপস্থিতি নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন। বিশেষ করে সমাপনি বক্তৃতায় বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ শিক্ষামন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে সংসদে দেখা যায় না। তিনি তো বিদেশেই বেশি থাকেন। এর আগে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপি’র এমপিরা মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।