চাকরি পাওয়ার পর থেকেই নাভানাকে এড়িয়ে চলতে থাকে তন্ময় : এরপরেও বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় নুসরাত জাহান নাভানা নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে নিজ ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে পেঁচানো ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পুলিশ। নিহত নাভানা চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মাস্টারপাড়ার মৃত আবদুল হান্নান মুন্সীর ছোট মেয়ে ও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। আগামী ২৭ মার্চ নাভানার বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক ছিলো চুয়াডাঙ্গা হকপাড়ার আবদুল বারী মাস্টারের ছেলে তন্ময়ের সঙ্গে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তার পরিবারের লোকজন জানান, চুয়াডাঙ্গা মাস্টারপাড়ার আবদুল হান্নান মুন্সী ছিলেন শহরের ফেরিঘাট রোডের বিশিষ্ট ঢেউটিন ব্যবসায়ী। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম পপুলার ট্রেডার্স। তার মেয়ে নুসরাত জাহান নাভানা আহসান উল্লাহ মাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালে চুয়াডাঙ্গা হকপাড়ার আবদুল বারী মাস্টারের ছেলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সালমান শাহেদ তন্ময়ের পরিচয় হয়। সেই থেকে তাদের মন দেয়া নেয়া। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ছাত্রী ছিলো নাভানা। পরে নাভানা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ ভর্তি হয়। তন্ময় ও নাভানার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলে বেশ কয়েক বছর। কয়েকবার বিয়ের সম্ভাব্য দিনক্ষণ ঠিক হলেও আবদুল বারী মাস্টারের পরিবারের টালবাহানার কারণে তা ভেস্তে যায়। এরই মধ্যে গত সেপ্টেম্বর মাসে দুই পক্ষের মধ্যে লিখিতভাবে বিয়ের চুক্তি হয়। সেই মোতাবেক আগামী ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান নাভানার সঙ্গে তন্ময়ের বিয়ের দিনধার্য ছিলো। তাদের দুজনার মধ্যে প্রতিদিন মোবাইলফোনে কথা হতো। মোবাইলে প্রায়ই ঝগড়াও হতো। বুধবার রাতে কী কারণে নাভানা তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে। নাভানার মা হাজি উম্মে হামিদা জানান, বুধবার সন্ধ্যারাতে নাভানা ও তন্ময়ের মধ্যে উচ্চ বাক্য বিনিময় হয়। রাত ৯টার দিকে নাভানা ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের ফোনটি আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে। এক পর্যায়ে আমার ফোন দিয়ে তন্ময়ের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলে নাভানা। আমিও তন্ময়ের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলি এবং ঝইঝগড়ার কারণ জানতে চাই। কিন্তু তন্ময় তেমন কিছুই বলে না। রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিজের শোয়ার ঘরে চলে যায় নাভানা। সকালে তার উঠতে দেরি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে নাভানার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে জানালা দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় নাভানাকে দেখতে পায় বাড়ির কাজের মেয়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ নাভানার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ খান বলেন, নিহত নাভানার পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় তন্ময়ের নামে একটি মামলা করা করা হয়েছে। আমরা খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছি। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিহত নাভানার ছোট চাচা ফজলে রাব্বী ফিট্টু জানান, তন্ময় এক সময় বেকার ছিলো। এ কারণে বিয়ের দিনক্ষণ নিয়ে দু’পরিবারের মধ্যে টানাপড়েন চলছিলো। এ কারণে আমরা চেষ্টা করে এলজিইডির একটি প্রজেক্টে চাকরির ব্যবস্থা করে দিই তন্ময়ের। এরপর থেকেই তন্ময় ও তার পরিবার বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে থাকে। শেষমেশ বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হলেও তা আর কপালে জুটলো না। ফিট্টু আরও বলেন, তন্ময় বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করতো নাভানাকে। বিয়ের আগেই তালাক দেয়ার বিষয়ে আজেবাজে কথা বলতো। এমনটি তন্ময়ের পিতা আবদুল বারী ও মা রওশন আরা এও বলেছেন যে, বিয়ের পর দেনমোহরের টাকা শোধ করে তালাক দিয়ে দেয়া হবে নাভানাকে। এসব কারণেই নাভানা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। নাভানার চাচা ফিট্টু চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি লিখিত এজাহার দাখিল করেছেন। তাতে সালমান শাহেদ তন্ময়কে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। নাভানার চাচা জানান, আমরা তন্ময়ের পিতা-মাতাকেও আসামির কাঠগড়ায় তুলতে চাই। কারণ নাভানার আত্মহত্যার পেছনে তাদেরও উসকানি ও প্ররোচনা রয়েছে।
নাভানারা তিন ভাই বোন। নাভানা ছিলো সকলের ছোট এবং আদুরে। নাভানার বড় বোন সোহেলী বিবাহিত। মেজভাই হিনো বাগেরহাটে সরকারি চাকুরে। আগামী ২৭ মার্চ নাভানার বিয়ের দিনধার্য ছিলো। সেই হিসেবে হকপাড়ার আবদুল বারী মাস্টার ও আমাদের পরিবারের যৌথ সম্মতিতে বিয়ের আয়োজন পাকাপোক্ত করা হয়েছিল। বিয়ের জন্য কার্ড ছাপা হয়েছে। দাওয়াতও দেয়া হচ্ছিলো। এরই মধ্যে ঘটে গেল অঘটন। গতকাল বৃহস্পতিবার বাদমাগরিব জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে পিতার পাশে দাফন করা হয় নাভানাকে।