মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ায় মাদকবিরোধী জোরদার অভিযান অব্যাহত রেয়েছে। অভিযানে একের পর এক নেশাখোর ও মাদক পাচারকারী যেমন ধরাপড়ছে, তেমনই কেউ কেউ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে নিজেকে সুধরে সুপথে ফেরার শপথও করছে। কেউ কেউ ধরাপড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দ-িতও হচ্ছে। লাগাতার অভিযানে গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শিবপুর পশ্চিমপাড়ার সাগর খন্দকারের ৩ মাসের কারাদ-াদেশ দেয়া হয়েছে। গাঁজা পাচারের সময় কুষ্টিয়া পোড়াদহে রেলপুলিশের হাতে ধরা পড়েছে চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার হাবিবুর রহমান হাবিব। মেহেরপুর মুজিবনগর বল্লভপুরের মংলা ম-লকে তিন মাসের জেল দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ি পুলিশের হাতে ধরাপড়েছে ভারত সীমান্তবর্তী কুতুবপুরের আলা। তার নিকট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ভারত থেকে পাচার করে আনা ফেনসিডিল। এছাড়া দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের মাদক বিরোধী পৃথক অভিযানে ধরাপড়েছে ৫ জন। এদের নিকট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকারের মাদকদ্রব্য। কার্পাসডাঙ্গা এলাকায় বিজিবি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর নিয়ে অভিযান জোরদার করেছে। এ অভিযানে ইতোমধ্যেই সাড়া জাগিয়েছে। মহেশপুর বিজিবির হাতে ধরাপড়েছে এক নারী মাদক পাচারকারী। অপরদিকে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা যুবজোটের সভাপতি নাজমুল ইসলামসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে গাঁজাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মিরপুর থানা পুলিশ। এদিকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান জোরদার করার সাথে সাথে দর্শনা এলাকার বেশ ক’জন নারী পুরুষ মাদককারবারি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হাজির হয়ে সন্তানের মাথায় হাত দিয়ে শপথ করে মাদক ব্যবসা থেকে দূরে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা শিবপুরের সাগর খন্দকারকে কারাদ- প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার মর্তুজাপুর থেকে গাঁজাসহ তাকে আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩ মাসের কারাদ- প্রদান করেন বিচারক।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাদিকুর রহমানের নেতৃত্বে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ সঙ্গীয় ফোর্স দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলার মর্তুজাপুর গ্রামে অভিযান চালান। এসময় একটি ইটভাটা থেকে ২০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয় শিবপুর পশ্চিমপাড়ার রশিদ খন্দকারের ছেলে সাগর খন্দকারকে (২০)। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাগরকে ৩ মাসের সশ্রম কারাদ- প্রদান করেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান। পরে গতকালই তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে ৫জন মাদককাররবারিকে গ্রেফতার করেছে। এসময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১ কেজি ৩শ’ গ্রাম গাঁজা ও ৬ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল। গ্রেফতারকৃতরা হলেন দামুড়হুদার জয়রামপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে হাসেম আলি, জেকের আলির ছেলে আকবর আলী ও মোক্তারপুর গ্রামের মনির উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান, আবু বক্করের ছেলে সামাদ আলী এবং মুজিবনগর থানার মানিকনগর গ্রামের আরশাদ আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান মিঠু। গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে সন্ধ্যা রাত অবধি পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরতে পৃথক স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল ভোর ৪টার দিকে দামুড়হুদা মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নাজমুল হুদার নেতৃত্বে উপপরিদর্শক মিল্টন সরকার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে হাসেম আলীকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন। এসময় তার বসত বাড়ি তল্লাশি করে খাটের নিচ থেকে ১ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। পরে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জয়রামপুর কাঁঠাল তলা নামক স্থান থেকে আকবর আলীকে গ্রেফতার করে। এসময় তার কাছ থেকে ৬ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মোক্তারপুর বাজার থেকে মিজানুর রহমান ও সামাদ আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ২শ’ গ্রাম গাঁজা। অপরদিকে বিকেলে দামুড়হুদা মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার উপপরিদর্শক শেখ রফিকুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক তোহিদুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালান গোবিন্দহুদা গ্রামে। এসময় ১শ’ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেফতার করা হয় আসাদুজ্জামান মিঠুকে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে দামুড়হুদা মডেল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে।
এদিকে, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ির পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে কুতুবপুরের আলাকে ফেনসিডিলসহ আটক করেছে। গত সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার কুতুবপুর মাঝপাড়ায় থেকে তাকে আটক করা হয়।
পুলিশসূত্রে জানা যায়, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ এসআই সাইফুল ইসলাম গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারেন উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের মাহির উদ্দিনের ছেলে আলা ফেনসিডিল বেচাকেনা করছে। এ সংবাদ পেয়ে এসআই সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা অভিযান চালিয়ে আলাকে আটক করেন। এসময় উদ্ধার করা হয় ৭ বোতল ফেনসিডিল। কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ির পুলিশের ইনচার্জ এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, আটককৃত আলা এলাকায় একজন চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী। পুলিশ- প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিলো। মাদক নির্মূলে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের মুন্সিপুর কোম্পানি বিজিবি ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে মাদক ও চোরাচালান বিরোধী চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান চালিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে এ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। মুন্সিপুর বিজিবির নায়েক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, চুয়াডাঙ্গা ৬ ব্যাটেলিয়নের উদ্যোগে এ বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। মাদক, চোরাচালান বিরোধী, পলাতক আসামি এসব অপরাধের জন্য এ অভিযান। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এবিষয়ে এলাকার সকল সচেতন ব্যক্তিরা এ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেন, সরকার যে মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে তা যেন অব্যাহত থাকে। তবে তারা আরও বলেন, বিজিবির এ বিশেষ অভিযান যদি অব্যাহত থাকে তাহলে মাদক নির্মূল হবেই।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন গাঁজা রাখার অপরাধে মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের মংলা ম-লকে ৫ মাসের বিনাশ্রম কারাদ-াদেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উসমান গনি এ সাজা দেন। সাজাপ্রাপ্ত মংলা ম-ল বল্লভপুর গ্রামের সত্যেন ম-লের ছেলে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতসূত্রে জানা যায়, মেহেরপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা গতকাল বেলা ১১টার দিকে মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের পূর্বপাড়ায় অভিযান চালিয়ে একশ’ গ্রাম গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী মংলা ম-লকে আটক করে। পরে তা ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে উপস্থাপন করলে আদালত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মংলা ম-লকে এ সাজা দেন।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা যুবজোটের সভাপতি নাজমুল ইসলামসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় মাদকদ্রব্য। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুর থানা পুলিশ আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। আটককৃতরা হলেন মিরপুর উপজেলা যুবজোটের সভাপতি ও মালিহাদ ইউয়িনের মালিথাপাড়ার মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে নাজমুল ইসলাম, একই এলাকার হায়াত আলীর ছেলে আব্দুল আলিম এবং মিরপুর পৌরসভার সুলতানপুর মহল্লার লিয়াকত আলী খানের ছেলে রবিউল ইসলাম।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, গত সোমবার থানা পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে মালিহাদ মারফতপাড়াস্থ কেএম আইডিয়াল কলেজের সামনে থেকে ১শ’ গ্রাম গাঁজাসহ নাজমুল ইসলাম ও আব্দুল আলিমকে আটক করে। অপরদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের চুনিয়াপাড়া নামক স্থানে অভিযান চালিয়ে রবিউল ইসলামকে দশ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে থানায় মাদকদ্রব্য আইনে পৃথক মামলা দায়ের করে দুপুরে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
অপরদিকে কুষ্টিয়ায় গাঁজাসহ এক যুবককে আটক করেছে পোড়াদহ রেলওয়ে থানা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পোড়াদহ রেলওয়ে জংশন স্টেশনের ৩নং প্লাটফর্ম থেকে ওই যুবককে আটক করা হয়। আটককৃত ওই যুবকের নাম হাবিবুর রহমান হাবিব। সে চুয়াডাঙ্গা সদরের রেলপাড়ার মৃত নুরুজ্জামানের ছেলে।
কুষ্টিয়ার পোড়াদহ রেলওয়ে থানার এসআই গৌতম কুমার পাল জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাবিবুর রহমান হাবিবকে আটক করা হয়। এসময় তল্লাশি চালিয়ে তার স্কুল ব্যাগ থেকে ৯০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পোড়াদহ রেলওয়ে থানায় মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মহেশপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের মহেশপুরে ফেনসিডিলসহ এক নারী ও ভ্যান চালাককে আটক করেছে ৫৮ বিজিবি। গত সোমবার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৫৮ বিজিবির টহল দল মহেশপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের পাশ থেকে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার আসলাম উদ্দীনের স্ত্রী আলেয়া খাতুন এবং মহেশপুর উপজেলার কানাইডাঙ্গা গ্রামের মোশারফ হোসেনের পুত্র ভ্যানচালক আরিফুল ইসলামকে ৫৯ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে। মহেশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোর্শেদ হোসেন খাঁন জানান, এ ব্যাপারে মাদক আইনে মামলা হয়েছে। আসামিদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।