মাহফুজ মামুন/সোহেল হুদা: বৈরি আবহাওয়া কারণে চুয়াডাঙ্গায় গমে ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। হেড ও নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গম। আলমডাঙ্গায় গমের মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে এ ব্লাস্ট রোগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে দেড় হেক্টর জমিতে গম ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধের জন্য কৃষকরা কীটনাশক ব্যবহার করেও পাচ্ছেন না কোনো সুফল। এ মরসুমে গম চাষ করে লোকসানের মুখে পড়তে হবে চাষিদের। চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় এ মরসুমে ৭৭১ হেক্টর জমিতে গম চাষ হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২শ হেক্টর জমিতে বেশি গমের আবাদ হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসূত্রে জানা যায়, গত বছর গমের ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় এ মরসুমে কৃষকরা অন্য ফসল বাদে গম চাষ করছেন। এ বছর জেলায় প্রায় ২শ হেক্টর জমিতে বেশি গমের আবাদ হচ্ছে। বারি ২৬-৩০ জাতের গম লাগানোর কারণে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আলমডাঙ্গা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি গমের আবাদ হয় প্রতি বছর। আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া, নগরবোয়ালিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গমে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন অন্যান্য ক্ষেতে গম ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
বর্তমান বৈরি আবহাওয়ার কারণেই ব্লাস্ট রোগ দেখা দিচ্ছে। রাতে তাপমাত্রা কম থাকছে; দিনে তাপমাত্রা বেশি থাকায় ও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির কারণে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গম। ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেও ব্লাস্ট থেকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গমের ক্ষেতে হঠাৎ করে এ রোগ দেখা দিয়েছে। যার ফলে মাঠের পর মাঠ গম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গমের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে। গমে কোনো ফল থাকছে না। দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে গম পেঁকে রয়েছে। গমের শীষ শুকিয়ে গেলেও গাছের রঙ সবুজ থাকছে। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্তের কারণে কৃষকরা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
চাষিদেরকে মাঠপর্যায়ে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে নিয়মিত। কয়েকটি কীটনাশক ব্যবহার করার কথাও বলা হচ্ছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলেই ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ অনেক অংশে হ্রাস পাবে।
গত বছর ৫৭৪ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছিলো। গমের জমিতে গত বছর ব্লাস্টসহ অন্য রোগ তেমন ছিলো না। গমের দাম ও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা এ বছর তামাক চাষ বাদ দিয়ে গম চাষে আগ্রহ দেখান। এ মরসুমে ৭৭১ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৩৫ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৪৯২ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৩৭ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ১০৭ হেক্টর জমিতে গম চাষ হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক খবির উদ্দিন, শাহাবুদ্দিন ও জাহিদুল ইসলাম জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে গম শুকিয়ে যাচ্ছে। কীটনাশকের দোকান থেকে বিষ কিনে গমের জমিতে দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। গম চাষে যে খরচ তা হয়তো উঠবে না। গুনতে হতে পারে লোকসান। ধারকর্য করে গম চাষ করেছি। অথচ গম হয়ে যাচ্ছে চিটে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা গম ক্ষেত ঘুরে দেখেছি। অল্প কয়েক জায়গায় গম ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, আমরা কৃষকদের বারি ৩০ জাতের গম চাষে নিরুসাহিত করছি। বারি ৩১-৩৩ জাতের গম বীজ ব্লাস্ট প্রতিরোধী। কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে গম চাষের জন্য কৃষকদের বলে থাকি।