ক্ষোভ ও প্রশ্নবাণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আয়োজকরা

আলমডাঙ্গায় বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা ও সচেতনতা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গায় বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা ও সচেতনতা শীর্ষক সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের ক্ষোভ ও প্রশ্নবাণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন আয়োজকরা। গতকাল ৬ ফেব্রæয়ারি বেলা ১১টায় আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের মিলনায়তনে ওই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র উপজেলা আ.লীগ সভাপতি হাসান কাদির গনু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদ্বয় যথাক্রমে সালমুন আহমেদ ডন ও কাজী মারজাহান নীতু, মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নুর মোহাম্মদ জকু, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নু, চুয়াডাঙ্গা টিটিসির ইন্সট্রাক্টর মঈনুল ইসলাম শুভ, আব্দুস সালাম, পৌর আ.লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম আজম, পৌর আ.লীগের সম্পাদক কাউন্সিলর মতিয়ার রহমান ফারুক, বাড়াদী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা, হারদী মীর সামসুল ইসলাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান, এনটিভির চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি অ্যাড রফিকুল ইসলাম, দৈনিক প্রথম আলোর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি শাহ আলম সনি, আলমডাঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আশরাফুল হক। এছাড়াও সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সেমিনারের শুরুতেই বৈদেশিক কর্মসংস্থানের দক্ষতা নিয়ে প্রামাণ্য ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন জেলা শহরে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে নামমাত্র টাকায় বিদেশে যাচ্ছে তৃণমূলের নারী-পুরুষ। এতে করে দেশে বাড়ছে রেমিটেন্সের পরিমাণ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতির চাকা। সেমিনারে বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমও তুলে ধরেন কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
জামজামি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের জেলাতে বিদেশে যেতে হলে দালাল নির্ভরই থাকতে হয়। কারণ এ জেলাতে জনশক্তির অফিস আছে এটিই মানুষ জানে না। অথচ সরকার প্রতিবছর এ খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে।
দৈনিক প্রথম আলোর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি শাহ আলম সনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার চারটি উপজেলাতে কয়েক শ’ দালাল সক্রিয় রয়েছে। তাদের আগে আইনের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে প্রতিটি ওয়ার্ডে সচেতনতামূলক ব্যানার, লিফলেট ফেস্টুন ও বিলবোর্ড দিলে মানুষ কিছুটা হলেও সচেতন হবে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান সালমুন আহাম্মেদ ডন বলেন, প্রতিদিনই স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় দেখি বিদেশে পাঠানোর নামে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ টাকা। প্রতারিত মানুষ ঘুরছে দ্বারে দ্বারে। অথচ আমাদের জেলার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তাদের এসব বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপের খবর দেখি না। বিষয়টি দুঃখজনক।
আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র হাসান কাদির গণু কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাদের জেলাতে শতশত মানুষ বিদেশে গিয়ে দালালদের হাতে পড়ে স্বর্বশান্ত হয়ে দেশে ফিরছেন। অনেকে বিদেশের কারাগারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কিন্তু এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন বলেন, তৃণমূলের পিছিয়ে পড়া জনগণকে দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এর সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। এজন্য সমাজের সবস্তরের মানুষের সহযোগিতা চান তিনি।
সমাপনী বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন আলী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও সেদিকে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো উপজেলা পর্যায়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের দক্ষতা ও জনসচেনতা নিয়ে প্রোগাম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তার বিস্তৃতি ছড়িয়ে দেয়া হবে প্রান্তিক পর্যায়ে। স্থানীয় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অবশ্যই এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন।