শামীম রেজা: চুয়াডাঙ্গায় ভুট্টার আবাদ প্রায় প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করছে। এক সময় এলাকার কৃষকদের প্রধান অর্থকরী ফসল আখ হলেও কালক্রমে তা বদলে ভুট্টায় রূপান্তর হয়েছে। পাট? বারবার যেভাবে কৃষকদের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়ায় তাতে কি ওদিকে কেউ তাকায়? আখ? ক্রয়কেন্দ্রে তথা সেন্টারে ওজন নিয়ে সন্দেহ, স্লিপ পেতেও ঘুরে ঘুরে চটি ক্ষয়, দামও লাভজনক নয়। এতোসব ঝামেলা কৃষকরা কতোদিন আর মেনে নেয়?
চুয়াডাঙ্গার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা ভুট্টার আবাদকেই এখন অধিক লাভজন বলে মন্তব্য করেন। বলেন, শুধু আখ-পাটের আবাদ থেকেই মানুষ মুখ ফেরায়নি, ধান-গমের আবাদ কমিয়ে ভুট্টার দিকেই ঝুঁকে পড়েছে এলাকার কৃষককুল। মূলত এ কারণেই প্রতিবছরেই ভুট্টার আবাদ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করছে। এবার যেমন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ চুয়াডাঙ্গার বিভাগীয় দাফতরিক হিসাবে এবার চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪ টি উপজেলায় মোট ৪৬ হাজার ৪শ ৩৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৫ হাজার ৪৮, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১০ হাজার ৫শ, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৪ হাজার ও জীবননগর উপজেলায় ৬ হাজার ৮শ ৫৯ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন কৃষকরা। গত বছরের আবাদ দেখে এবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪১ হাজার ১শ ৫০ হেক্টর। অর্থাৎ গতবছর চুয়াডাঙ্গার ৪টি উপজেলায় এ পরিমাণের জমিতেই ভুট্টার আবাদ হয়। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৪ হাজার ৪শ, আলমডাঙ্গায় ৮ হাজার, দামুড়হুদায় ১২ হাজার ও জীবননগরে ৮ হাজার ৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়। চলতি মরসুমে সকল উপজেলাতেই ভুট্টার আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে।
ভুট্টার আবাদের দিকে কৃষকদের এতো আগ্রহ কেন? এ আবাদে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে কতোটা? চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হরিবুলা সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবারের রবি মরসুমে ভুট্টার আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সরিষা, পেয়াজসহ অন্যান্য ফসল চাষে কৃষকদের আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে। ভুট্টা আবাদের দিকে কৃষকদের অধিক ঝুঁকে পড়ার আড়ালে রয়েছে লাভ। গতবছর লাভ হওয়ার কারণে এবার আবাদও করেছে বেশি। আর জমির উর্বরতা হ্রাস রোধে একই জমিতে একই আবাদ বারবার করার চেয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আবাদ করাই ভালো।
এক বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করতে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। প্রতিবিঘা জমিতে আবাদ করলে ভুট্টা পাওয়া যায় ৪০ থেকে ৫০ মণ। কী হয় এতো ভুট্টা? পশুপাখির খাদ্যই শুধু হয় না, শিশুখাদ্যেরও অন্যতম উপাদান এ সোনালি দানা ভুট্টা। দেশে উৎপাদিত ভুট্টায় চাহিদা পূরণ হয় না বলেই প্রতিবছরই প্রতিবেশী দেশ থেকে তা আমদানি করতে হয়। ফলে কৃষি বিভাগ এ আবাদে কৃষকদের নিরুৎসাহিত নয়, বরঞ্চ উৎসাহিতই করে আসছে।