সম্প্রতি এক সেমিনারে দালালচক্রের হাত থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের সুরক্ষা প্রদানের কথা বলেছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী। মন্ত্রীর এ বক্তব্য যথেষ্ট গুরুত্বের দাবি রাখে। দালাল ও প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে কেবল বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, পাশাপাশি অনেক প্রবাসী শ্রমিকও সর্বস্বান্ত হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। উদ্বেগজনক হলো, দালালচক্র ও প্রতারকরা অভিবাসন প্রত্যাশী বেকার জনগোষ্ঠীর ক্ষতি তো করছেই; উপরন্তু দেশেরও অপরিমেয় ক্ষতি করছে, যা রোধ করা জরুরি। বস্তুত প্রতারণার ঘটনা অব্যাহত থাকায় বহির্বিশ্বের সম্ভাবনাময় অনেক শ্রমবাজার এদেশীয় শ্রমিকদের জন্য নিষিদ্ধ জোনে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় কর্মপ্রত্যাশী অনেক বেকার তরুণ নানা মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টাকালে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। ভূমধ্যসাগর ও লিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশীদের মৃত্যুর ঘটনা ছাড়াও ইতিপূর্বে থাইল্যান্ডের গহিন অরণ্যে অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের গণকবরের সন্ধানও পাওয়া গেছে। সে সময় থাইল্যান্ডসহ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকেও এদেশীয় অবৈধ অভিবাসীদের উদ্ধার করা হয়েছিলো।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার পথ রুদ্ধ হওয়ার কারণেই মানুষ অবৈধ উপায়ে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করে থাকে। এটি করতে গিয়ে প্রতারক ও দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে তারা সর্বস্বান্তই হচ্ছে না, মৃত্যুমুখেও পতিত হচ্ছে; যা মোটেই কাম্য নয়। আমাদের অর্থনীতিতে কৃষির পরই প্রবাসী আয়ের স্থান। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবাসী শ্রমিকরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। মূলত প্রবাসীদের আয়েই পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু ইকোনমিক জোন, পায়রা বন্দর, কর্ণফুলী ট্যানেল ইত্যাদি বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে জনশক্তি রফতানি হয়, অধিকাংশই আধাদক্ষ বা অদক্ষ পর্যায়ের। অদক্ষ হওয়ায় এসব শ্রমিকের মজুরি হয় খুবই কম। ফলে জমিজমা বিক্রি বা ঋণ করে বিদেশে পাড়ি দেয়ার পর কঠোর পরিশ্রম করেও খরচের টাকা উঠানোই দুরূহ হয়ে পড়ে। এ বাস্তবতা সামনে রেখে দেশে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আন্তর্জাতিক পরিমরুলে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার এরই মধ্যে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিদেশ গমনেচ্ছু শ্রমিকদের জাপানিজ, কোরিয়ান, আরবি, ইংরেজি, ক্যান্টনিজ ইত্যাদি ভাষায় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে নারীকর্মীদের সুরক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থারও সংস্কার করা হয়েছে। দালাল ও প্রতারকদের খপ্পর থেকে বিদেশ গমনেচ্ছুদের সুরক্ষার পাশাপাশি উপযুক্ত ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তাদের গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।