ইভিএম নিয়েই যতো বিপত্তির আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আজই (শনিবার) প্রথম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার দুটি আসনের (ঢাকা-৬ ও ঢাকা-১৩) সবকটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হলেও রাজধানীর বেশির ভাগ অংশের ভোটারের ইভিএমে ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা নেই। ফলে এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো তারা এই অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। তবে বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ না দিয়ে ইভিএমে ভোট নেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে যেমন সমালোচনা আছে তেমনই এই যন্ত্র ভোট গ্রহণের সময় বিপত্তিতে পড়তে পারে আছে সে আশঙ্কাও।
যদিও ইভিএম কীভাবে কাজ করে তা ভোটারদের অবহিত করতে বৃহস্পতিবার অনুশীলনমূলক ভোটের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বেশ কিছু কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে এ বিষয়টি জানতে ভোটারদের আগ্রহ কম। অথবা আগ্রহ থাকলেও রাজধানীর ব্যস্ত জীবনও একটি কারণ।
জানা যায়, ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের দুইটি পর্যায় রয়েছে। প্রথম পর্যায়টি প্রিসাইডিং অফিসারের সামনে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে ভোটারের তথ্য নিশ্চিত করা। এ সময় যন্ত্রটি বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ শনাক্ত করবে এবং কম্পিউটারে ভোটারের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য ভেসে উঠবে। যদি ভোটার ভুল বুথে যান তবে তার তথ্য এখানেই পাওয়া যাবে না। ফলে তার ওই বুথে ভোট দেয়ার সুযোগ থাকবে না। আর তথ্য নিশ্চিতের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত হলে এরপর গোপন কক্ষে ভোট দিতে যাবেন তিনি।
এ দুটি পর্যায়ের মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসারের সামনে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে সেগুলোতে কমিশনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নেয়া যাবে। তবে গোপন কক্ষে ভোটার ভোট দেবেন একা। এখানে ভোট দেয়ার সময় তিন মেশিনে থাকা তিন ব্যালটে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে ভোট দিতে হবে তাকে। তাই গোপন কক্ষে ভোটাররা যদি ভোট দিতে গিয়ে ভুল করেন বা যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি দেখা দেয় তাহলে তার ভোট প্রয়োগ বিঘিœত হবে অথবা অন্য কারো সহায়তা নিতে হলে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গ হবে। আর এ জায়গাটি নিয়েই আপত্তি ও সংশয় ইভিএমে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানান, একজন ব্যক্তিকে আঙুলের ছাপ পরীক্ষার মাধ্যমে ভোটার হিসেবে শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে গোপন কক্ষে থাকা তিনটি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) স্বয়ংক্রিয়ভাবে সচল হবে। এখানে মেয়র পদের জন্য একটি ইভিএম, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোট দেয়ার জন্য আরেকটি ইভিএম এবং শেষটি থাকবে সংরক্ষিত আসনের নারীর প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য। এখানে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ভুল না করলে ভোট দেয়া সহজ, প্রতিটি মেশিনে প্রার্থীর নাম ও প্রতীক দেয়া থাকবে, ভোটার যাকে ভোট দিতে চান তার প্রতীকের বাম পাশের সাদা রঙের বাটনে একবার চাপ দিতে হবে। এ সময় প্রতীকের পাশে বাতি জ্বলে উঠবে। ভোট নিশ্চিত করতে ডানপাশের সবুজ বাটনে চাপ দিতে হবে। একই প্রক্রিয়ায় অন্যান্য পদের জন্যও ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। তবে বিপত্তি বাঁধবে ভোটার যদি সঠিক প্রার্থী ও প্রতীক নির্বাচনে ভুল করে ফেলেন তখন।
এ বিষয়ে তিনি জানান, কোনো কারণে ভোটার ভুল প্রতীক শনাক্ত করলে সবুজ বাটনে চাপ দেয়ার আগে তা সংশোধন করতে পারবেন। তবে সংশোধনের এই প্রক্রিয়াটি তাকে আগেই মুখে বলা হবে।
তিনি আরও জানান, ভুল সংশোধনের আগে ভোটারকে ডানপাশের লাল বাটনে চাপ দিতে হবে। এতে ভুল করে দেয়া পূর্বের ভোটটি বাতিল হয়ে যাবে। ফলে নতুন করে ভোট দেয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। সঠিকভাবে পুনরায় প্রতীকের পাশের বাটনে চাপ দিয়ে সবুজ বাটনে চাপ দিয়ে ভোট প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। সবুজ বাটন চাপ দেয়ার পর ভোট দেয়া প্রতীক ছাড়া বাকি সব প্রতীক অদৃশ্য হয়ে যাবে। এতে ভোটার নিশ্চিত হবেন যে ওই প্রতীকে তার ভোট দেয়ার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নাম্বার ওয়ার্ডের ভোটার ব্যাংকার হাসিবুল হাসান জানান, অনেকেই এ প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে ভোট দিতে পারবেন না। মেশিনের কারণে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের মুখে বলে দেয়া নির্দেশনার পরেও ভুল করলে তাদের সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। আর নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কেউ এই সাহায্য করতে গেলে ভোটারের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলে কিছু থাকবে না। সাহায্যের নামে কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে ভোটদানে কাউকে বাধ্য করারও আশঙ্কা থাকছে।
এদিকে একই কেন্দ্রের ভোটার হলেও ওই কেন্দ্রের নির্দিষ্ট বুথে না গেলে ভোট দিতে পারবেন না ভোটাররা। আর এসব কারণেও নির্ধারিত বুথে খুঁজে পেতে ভোটারদের বেগ পেতে হবে। তবে যদি নির্বাচনী কর্মকর্তারা কাগজের ভোটে যেভাবে কেন্দ্র ও বুথের তথ্য দিয়ে এসেছেন সেভাবে ইভিএম বুথের সামনে ভোটারদের সংখ্যা ও তথ্য অগ্রিম টানিয়ে দেন তাহলে এ জটিলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
অন্যদিকে, ইভিএম নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘ভোট দেয়ার পদ্ধতি নিয়ে বিলবোর্ড, সিনেমা হল, মসজিদ, বণিক সমিতি, মহল্লার বিভিন্ন সোসাইটিসহ সবখানেই ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। মক ভোটের আয়োজন করা হয়েছে। মিডিয়ায়ও অনেক প্রচার হয়েছে। লিফলেটটা যদি একজন শিক্ষিত লোক দেখেন, তিনি বুঝতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে ভোট দান অনেক সহজ।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘যেহেতু এটি একটি নতুন প্রযুক্তি, তার জন্য মানুষের সন্দেহও থাকে। এতে তারা অভ্যস্ত হয়ে গেলে তখন সহজ হয়ে যাবে। যেকোনো নতুন বিষয় এলে বুঝতে একটু কষ্ট হয়।’ এদিকে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৬টি আসনে পুরোপুরি ইভিএমের মাধ্যমে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনেও সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। একই পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে আরও কিছু আসনে। তবে ইভিএম কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ ধীর গতিতে হয়েছে বলে প্রায় সবখানেই অভিযোগ ওঠে। ভোটারদের ইভিএমে ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা না থাকায় নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, ‘ইভিএমে বিলম্ব হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে বিলম্ব হবে। সহজও হবে। বিলম্ব হলেও ৪টার পরে যদি কিছু ভোটার থেকে যান, তাদের আমরা নিয়ে নেবো। কেউ এসে ভোট না দিয়ে চলে যাবেন না।’