ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে কঠোর ব্যবস্থা : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধে আঘাত করে এমন কর্মকা-ের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার সবসময় সতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। বর্তমান সরকার মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্য সব ধর্মের চেতনা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর। বুধবার সংসদে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের প্রথম ৩০ মিনিট প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেয়ার জন্য নির্ধারিত ছিলো। জাপার এমপি রাঙ্গাঁ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মেয়েদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে তিনি সরকারের পদক্ষেপ জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। মেয়েদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। একই সদস্যের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সরকার অনেক আগেই শুরু করেছে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং এটা চলতে থাকবে। আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সরকার সচেতনতামূলক ব্যবস্থাও নিচ্ছে। জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে জননিরাপত্তা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। দুর্নীতি, মাদক নির্মূল ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হলো নিরাপদ জীবন ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গঠন। সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূলে পুলিশ বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারি দলের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের নানামুখী শ্রম কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে সাত থেকে আট লাখ কর্মী বিদেশে যাচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬৬ লাখ ৩৩ হাজার ২৫৪ জনের বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৩ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। সরকারি দলের আহসানুল ইসলামের (টিটু) সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী দেশে যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কেউ ইচ্ছা করে বেকার থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু এখন এত বেশি কর্মসূচি সরকার হাতে নিয়েছে, তাতে যে কেউ চাইলে কিছু না কিছু করে খেতে পারে। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান দিয়েছে। এই সম্মানটাই বড় পদক। এর পরে পদক দেয়ার কি দরকার আছে? মুজিববর্ষ উপলক্ষে বর্তমানের শিশু-কিশোর ও যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনানোর জন্য আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে যেখানে আছেন, আপনারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনান। যেভাবে যুদ্ধ করেছেন, সেই গল্প তাদের কাছে বলুন; যাতে তারা যেনো দৃঢ়চেতা মনোবল নিয়ে সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে পারে, দেশকে ভালোবাসতে পারে, দেশ গড়ে তুলতে পারে। বিএনপি দলীয় সদস্য হারুনুর রশীদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, প্রটোকল ছাড়া টিম নিয়ে বেরিয়ে ঢাকা শহরের তরুণ ও যুবকরা কেমন আছে, তা দেখবেন কিনা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রটোকল নিয়ে তিনি চলাফেরা করলেও ঢাকা শহরের অবস্থা তিনি জানেন। দায়িত্বশীল হিসেবে দেশের সবদিকে তার নজর রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রটোকল নিয়ে চলাচলে নিরাপত্তার বিষয় আছে- এটাও যেমন ঠিক, আবার শহর বা দেশের অবস্থা আমি একেবারেই জানি না তা নয়। আমি সবদিকেই নজর রাখার চেষ্টা করি। ভালোভাবে লক্ষ্য রাখি। যেহেতু এ দেশের দায়িত্ব আমি নিয়েছি। সবদিকে নজর দেয়া আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। তবে এতে এটাও শুনতে হয় যে, প্রধানমন্ত্রীকে কেন সব কাজ করতে হয়?