২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের ওপর নতুন এক সমস্যা এসে চেপে বসে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ আশ্রয় নেয় কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায়। ছোট অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ এ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসিত হলেও সংকট সমাধানে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বন্ধ হয়নি রোহিঙ্গা গণহত্যা। মিয়ানমার বরাবর সব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার আবেদন নিয়ে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে যায় আফ্রিকার ছোট দেশ গাম্বিয়া। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে গাম্বিয়ার করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারকে জরুরি ভিত্তিতে চার দফা অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস, আইসিজে। আইসিজের দেয়া অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা কোনো পক্ষ এমন কিছু করতে পারবে না, যা গণহত্যা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। গণহত্যার অভিযোগের সব আলামত তাদের সংরক্ষণ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার যে আবেদন গাম্বিয়া করেছে, তা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছে আইসিজে। সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে মিয়ানমারকে চারটি নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। এই রায় যেদিন হচ্ছে সেদিনই ঢাকায় আলাদা এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আর্ন্তাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিকল্প একটি ‘এডহক ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের প্রস্তাব করবেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি।
এই রায়ের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। আইসিজের প্রেসিডেন্ট এই রায় ঘোষণার সময় বলেছেন, তাদের এই আদেশ মেনে চলতে আইনগতভাবে মিয়ানমার বাধ্য। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেরও কোনো সুযোগ নেই। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আইসিজের রায়কে তারা আমলে নিয়েছে। মিয়ানমারের তদন্ত কমিশন যুদ্ধাপরাধের তথ্য পেয়েছে। সেগুলো এখন তদন্ত করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিচারব্যবস্থায় বিচার করা হচ্ছে। অন্যদিকে ‘জেনোসাইড’ থেকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের আদেশকে মাইলফলক হিসেবে দেখছেন রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী ও বিশ্লেষকরা। আইসিজের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটি মানবতার জয়, বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারকর্মীদের জন্য মাইলফলক।
আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তাতে রোহিঙ্গা সংকটটি আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রথমবারের মতো স্বীকৃতি পেলো। এতে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাড়বে। আন্তর্জাতিক আদালতের এ রায় যদি মিয়ানমার বাস্তবায়ন করে এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ প্রয়োগ অব্যাহত থাকে তাহলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথ সুগম হবে। আইসিজের এ আদেশ পুরোপুরি মেনে চলতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানানোর পাশাপাশি রায় মেনে চলার বিষয়ে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে উদ্যোগী হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।