মাজেদুল হক মানিক: নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মেহেরপুর জেলার গমক্ষেত। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। প্রতিকুল আবহাওয়ায় রোগ বালাই বেশি হচ্ছে। জোরালো প্রতিরোধ ও প্রতিকার ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে জানাচ্ছে কৃষি বিভাগ। বিশেষ করে যথাযথ ছাত্রক নাশক স্প্রে করতে তাগিদ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসূত্রে জানা গেছে, চলতি মরসুমে মেহেরপর জেলার তিনটি উপজেলায় ১১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর বেশি। আর গেল বছরের চেয়ে এবার আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর বেশি জমি।
চাষিরা জানান, গেল বছরের বোরো মরসুম থেকে এ সময় পর্যন্ত ধানের দর পতন হয়েছে। ফলে চাষিরা লাভজনক গম আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। উচ্চ ফলনশীল ও ব্লাস্ট প্রতিরোধী বারি গম ৩৩, রোগ সহনশীল বারি গম ৩০ ছাড়াও আবাদ হয়েছে বিভিন্ন জাতের গম। এর মধ্যে বারি গম ২৪ (প্রদীপ), বারি গম ২৬, বারি গম ২৩ জাতে রোগবালাই বেশি দেখা দিয়েছে। তবে বারি গম ৩০ ও বারি গম ৩৩ জাতের ক্ষেতগুলোতে এখনো কোনো রোগ বালাই দেখা যায়নি।
বিভিন্ন মাঠ ঘুরে কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডিসেম্বর মাসে দু’দফা বৃষ্টির পর আগাম আবাদকৃত গমের পাতা গোড়া থেকে হলুদ হয়ে যাচ্ছে। কৃষি অফিস এ রোগকে মরিচা রোগ বলে চিহ্নিত করেছে। অপরদিকে কিছু কিছু ক্ষেতে হেড ব্লাইড দেখা দিয়েছে। হেড ব্লাইড আক্রান্ত ক্ষেতে ফলন কমে যাবে। এছাড়াও কার্তিক মাসের শুরুতে যারা গম বীজ বোপণ করেছিলেন এমন কিছু ক্ষেতে হুইট ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বি.এম.ডাব্লিউ.আর.আই) গবেষণা প্রতিনিধিদল আক্রান্ত ক্ষেত পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
গবেষণা দলের সদস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রেজাউল কবির বলেন, মরিচা ও হেড ব্লাইড রোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেতে হুইট ব্লাস্টও পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে প্রতিরোধী ব্যবস্থা জোরাদার করা জন্য চাষিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, গম ক্ষেতের যেসব রোগ চিহ্নিত করা হয়েছে তা প্রতিকারে চাষিদেরকে দ্রুত স্প্রে করার তাগাদা দেয়া হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বিষয়টি সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত. ২০১৭ সালে মেহেরপুর জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৮টি জেলায় বাংলাদেশে প্রথম হুইট ব্লাস্ট আক্রমণ দেখা যায়। পরের বছর থেকে গম আবাদে ভাটা পড়ে। তবে গেল বছর থেকে ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও রোগ বালাই সহিষ্ণু গমের জাত আবাদের মধ্যদিয়ে চাষিরা আবারও গম আবাদে আগ্রহী হয়েছেন।