একটি বেগুনের ওজন ৭৫০ গ্রাম থেকে এক কেজি
মাজেদুল হক মানিক: একবেলা তরকারি রান্নার জন্য একটি বেগুনই যথেষ্ট। ওজন সাড়ে সাতশো গ্রাম। অপরদিকে ফলন আর স্বাদে কৃষক ও ক্রেতারা আকৃষ্ট। মেহেপুরের এ আলফাজ বেগুন প্রতি বছরই তাই বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে সুনামের সাথেই। কৃষি বিভাগীয় পর্যায়সহ সারাদেশে এ বেগুন ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
পূর্বমালসাদহ গ্রামের চাষি আলফাজ উদ্দীন স্থানীয় জাত থেকে বাছাই করে বড় আকারের এই বেগুনের জাতটি নির্বাচন করেছেন। এলাকায় এখন আলফাজ বেগুন নামে জাতটি আবাদ হচ্ছে। ক্রেতারাও আলফাজ বেগুনের প্রতি বেশ আকৃষ্ট।
বেগুনের জাত নির্বাচন বিষয়ে আলফাজ উদ্দীন বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে আমার বেগুন ক্ষেতের মধ্যে একটি গাছে বড় আকারের কয়েকটি বেগুন নজরে পড়ে। সেগুলো বীজ হিসেবে রেখে পরের বছর আবাদ করি। এভাবে কয়েক বছর আবাদ করার পর একটি জাত নির্বাচন করতে সক্ষম হই। গেল ৪/৫ বছর ধরে নিজে আবাদ করা ছাড়াও বিভিন্ন চাষির কাছে চারা বিক্রি করছি।
আলফাজ বেগুনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা গেছে, দেশীয় জাতের বেগুনের গাছের মতোই দেখতে এ বেগুন গাছ আকারে ছোট; তবে ঝোপালো। প্রতিটি ডগায় এক ইঞ্চি পরপর গিট্টায় বেগুন ধরে। ৩শ গ্রাম থেকে ৭৫০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয় একেকটি বেগুন। কোনো কোনোটি এক কেজি পর্যন্তও হয়ে থাকে। তাই ফলন অন্যান্য জাতের চেয়ে অনেক বেশি।
চাষ সম্পর্কে আলফাজ উদ্দীন বলেন, বোশেখ মাস থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত চারা তৈরি করে রোপণ করা যায়। রোপণের ৪৫ দিনের মধ্যে ফুল ও ফল ধরে। এক বছর পর্যন্ত বেগুন পাওয়া যায়। পৌষ-মাঘ মাসের দিকে প্রতি সপ্তাহে বিঘায় ২০-২৫ মণ বেগুন ওঠে। সার ও কীটনাশক অন্যান্য জাতের চেয়ে অনেক কম লাগে।
ইতোমধ্যে গাংনীর স্বদেশ সীড এ বেগুনের বীজ উৎপাদন শুরু করেছে আলফাজ উদ্দীনের মাধ্যমে। স্বদেশ সীড পরিচালক (উৎপাদন) জিনারুল ইসলাম দিপু বলেন, আগামী চৈত্র মাসের আগেই আমরা বেগুন বীজ চাষিদের মাঝে বিক্রি শুরু করবো।
স্থানীয় জাতের বেগুন আকারে ছোট ও ফলন কম। তাই আলফাজ বেগুন চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন অনেক কৃষক। পূর্বমালসাদহ গ্রামের বেগুন চাষি মুক্তারুল ইসলাম বলেন, গত বছর থেকে আমি আলফাজ বেগুন চাষ করছি। অন্যান্য জাত আবাদের চেয়ে এ জাত অনেক লাভজনক তাই এখন আলফাজ বেগুন চাষ করি।
এদিকে স্থানীয় বাজারগুলোতে আলফাজ বেগুন নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে বেশ সাড়া রয়েছে। সবজি বাজারের ডালিতে সাজানো ব্যতিক্রমী এ জাত সহজেই ক্রেতাদের নজর কাড়ে। গাংনী বাজার থেকে আলফাজ বেগুন নিয়মিত ক্রয় করে থাকেন অনেকে। এদের মধ্যে ধানখোলা গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, আকারে বড় ও দেখতে খুব সুন্দর। অল্প পানিতে সিদ্ধ হয় এবং খেতেও সুস্বাদু। তাই আলফাজ বেগুনের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হয়েছে।
জাত নির্বাচনের মাধ্যমে ভালো জাত পাওয়া যায় উল্লেখ করে গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা হচ্ছে ইনব্রিড ভ্যারাইটি। বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি অনেক উদ্ভাবনী কৃষক এভাবে জাত নির্বাচন করে থাকেন। এগুলোর ফলন ভালো হয় এবং অনেক বছর পর্যন্ত এ জাতটি আবাদ করা যায়। সারাদেশে এমন জাত ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা লাভবান হবেন। আমরা আলফাজ উদ্দীনের বেগুন ক্ষেত পরিদর্শন করে অন্যান্য চাষিদেরকে উদ্বুদ্ধ করবো।