পবিত্র রমজান আসতে আরও অন্তত তিন মাস বাকি। রমজানে খাদ্যপণ্যের বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে অতি মুনাফা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। তাই রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে তিন মাস আগেই সরকারের ১০ সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, রর্্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনিটরিং টিম ইত্যাদি। তারা খুচরা বাজার থেকে শুরু করে দেশের পাইকারি ও মোকামগুলোয় অভিযান চালাবে, যাতে রমজানকে পুঁজি করে কারসাজির মাধ্যমে কেউ অতি মুনাফা লুটতে না পারে। উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়; তবে প্রতি রমজানে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যে চক্রটি ভোক্তাদের পকেট কেটে থাকে, ১০ সংস্থার তদারকি তাদের কতটা নিরস্ত করতে সক্ষম হবে, সেটা দেখার বিষয়। উল্লেখ্য, গত বছরও রমজানের আগে সরকারের সাত সংস্থাকে বাজার তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তাতে খুব একটা সুফল মেলেনি। অসাধু ব্যবসায়ীরা যথারীতি নানা অজুহাতে ভোক্তাদের কাছে বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করেছে। এবার যেন তেমনটি না হয়, সে জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। এবার এমন এক পরিস্থিতিতে বাজার তদারকির উদ্যোগ নেয়া হলো যখন বাজারে পেঁয়াজ, চিনি, ভোজ্যতেল, ডালসহ বেশকিছু খাদ্যপণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। রমজানেও এ পণ্যগুলোর চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে ব্যবসায়ীরা রমজানের আগেই এসব পণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ খুঁজতে পারে। তারা যাতে সেই সুযোগ না পায়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে। এদিকে চালের বাজার আবারও অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করেছে। গত বছর জানুয়ারি ও নভেম্বরে দু’দফা চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছিলো। এ জন্য উভয় ক্ষেত্রেই মিলারদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হয়েছিলো। এবারও তাই। এ ব্যাপারে সতকর্তা ও কঠোরতার বিকল্প নেই। চালের বাজার আরও বেশি কঠোর তদারকির আওতায় আনা উচিত, কারণ ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। এ বাজারে যে কোনো ধরনের কারসাজি প্রতিরোধ করতে হবে কঠোরভাবে। সেই সঙ্গে চালের পর্যাপ্ত মজুদও নিশ্চিত করতে হবে। বস্তুত বাজারে পণ্যমূল্য নির্ভর করে চাহিদা ও জোগানোর ওপর। জোগান কমে গেলে অথবা চাহিদা বৃদ্ধি পেলে পণ্যের দাম বাড়ে, যা চালসহ অত্যাবশ্যকীয় সব পণ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। রমজানকে বলা হয় সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস। অথচ এ মাসেই বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা লাভের আশায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটি দুর্ভাগ্যজনক। ব্যবসায় মুনাফা অর্জন একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু মুনাফা অর্জনের নামে নৈতিকতাহীন কর্মকা- সমর্থনযোগ্য নয়। ব্যবসায়ীরা সৎ ও আন্তরিক হলে বছরের অন্যান্য মাস তো বটেই, রমজান মাসেও দ্রব্যমূল্য সহনীয় থাকতে পারে। রমজান সামনে রেখে বাজার তদারকির যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার তা ফলপ্রসূ হবে।