মাত্র ৩৩ ঘণ্টার জীবদ্দশায় জান্নাতুল যে বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেলো, তা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান যুগে নিশ্চয় প্রত্যাশিত নয়। কিছুটা হলেও লজ্জার। যদিও এরকম ঘটনা এটাই প্রথম নয়। মৃত বলে ঘোষণা দেয়ার পরও অনেকের বেঁচে থাকার উদাহরণ রয়েছে। তবে জান্নাতুলের এই মায়াবিজগতে বেশিদিন বেঁচে থাকা হলো না। গতকাল মারা গেছে সে। যেটুকু সময় সে বেঁচে ছিলো অতটুকু সময়েই যে শিক্ষা দিয়ে গেলো, তা থেকে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগে সেবারব্রত নিয়ে কর্মরতদেরকে কতটুকু শিক্ষা নেবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
চুয়াডাঙ্গা হাজরাহাটির এক দম্পতি তাদের সন্তানের আগমনি দিনক্ষণ গুণছিলেন। দফায় দফায় চিকিৎসাও নিয়েছেন প্রসূতি। পরশু শহরের একটি নার্সিং হোমে ভূমিষ্ঠ হয় নবজাতক। কিছুক্ষণ পর নবজাতককে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। মায়ের মন মানেনি। মৃত বলে যে নবজাতককে পালিথিনে মোড়ানোর প্রস্তুতি চলছিলো সেই সন্তানকে কোলে নিয়েই মা টের পান তার কন্যা বেঁচে আছে। তার আকুতিতে পুনরায় নাড়ি দেখে মৃত বলে ঘোষণা দেয়া চিকিৎসকই পরবর্তিতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে নেয়ার পর নবজাতক নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকাকালে পিটপিট করে তাকিয়েছে। নড়েছে। এতেই আশাবাদি ছিলেন ওর দাদি। তিনি নবজাতকের নাম রেখেছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস।
জান্নাতুল নির্ধারিত সময়ের দু-আড়াই মাস আগেই ভূমিষ্ঠ হয়। এ কারণেই তার শারীরিক অবস্থা ছিলো খুবই দুর্বল। তাই বলে জীবিতকে মৃত বলে পলিথিনে মোড়াতে হবে? আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এরকম অনেক নবজাতককেই সুস্থ করে তুলতে সক্ষমতা দেখাচ্ছে। তা হলে চুয়াডাঙ্গার ওই নার্সিং হোমে মৃত বলে ঘোষণা দেয়া হলো কেন? জানা-বোঝার ভুল নাকি দায়িত্বে অবহলা? আমাদের সমাজে স্বাস্থ্য প্রশাসন থাকলেও ন্যূনতম এ প্রশ্নের জবাব উদঘাটনের কোনো পদক্ষেপ নেবে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। এর চেয়ে অনেক বড় বড় ঘটনাও বেমালুম ধামাচাপা পড়ে যায়। একের পর এক ঘটনা মনগড়া অজুহাতে বা কয়েকদিন নীরব থেকে ধামাচাপা দেয়া যায় বলেই কর্তব্যপরায়নতায় ঘাটতির বিষয়টি বার বার ফুটে ওঠে।
একজন চিকিৎসক রোজ অনেক রোগী দেখেন, কেউ কেউ বহু নবজাতককে ভূমিষ্ঠও করেন। তিনি যদি ভাবেন অতোর মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে একটু ত্রুটি হলে তাতে তার কি আসে যায়? এই উক্তি যুক্তিতে তিনি স্বস্তি নিয়ে বিছানায় গেলেও সামান্য ত্রুটিতে যার সর্বনাশ হয় তার ক্ষতিপোষানো কি সম্ভব? নিশ্চয় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বীকৃত সনদপ্রাপ্তদের মেধা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। ধৃষ্ঠতার শামিল। সমাজের সাধারণ মানুষ যাদেরকে অতোটা সমীহ করে, তাদের কারো কারোর কর্তব্যহীনতা যেমন কষ্টের কারণ, তেমনই প্রতিকারহীনতা পীড়াদায়ক।