আলমডাঙ্গা ব্যুরো: অভিনব কৌশলে আলমডাঙ্গার কয়েকজন জুয়েলার্স মালিকের নিকট থেকে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিয়ে গেছে এক প্রতারকচক্র। এক জুয়েলার্স মালিকের বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রতারণার ফাঁদ থেকে বেঁচে গেছেন অনেকে।
আলমডাঙ্গা সোনাপট্টির একাধিক ব্যবসায়ীসূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ আগে অজ্ঞাত ২ ব্যক্তি আলমডাঙ্গায় আসেন এবং তারা নিজেদেরকে আপন সহোদর পরিচয় দেন। তারা পরিচয় দেয়ার সময় ভিজিটিং কার্ডও কয়েকজনকে প্রদান করেন। তাতে এক ব্যক্তির নাম দেলোয়ার হোসেন ও অপরজনের নাম আনোয়ার হোসেন উল্লেখ আছে। বাড়ি ঢাকায়। তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম ঢাকা ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড অটো হাউজ। তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, পাবনা ও খুলনায়। আলমডাঙ্গায় এসে তারা সোনাপট্টিতে অবস্থিত মন্দির মার্কেটের তত্ত্বাবধায়ক গোপাল অধিকারী ও উত্তরা গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক গিরিধারী লাল মোদীর ম্যানেজার মহেশের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা মন্দর মার্কেটের দোতলা ভাড়া নিতে চুক্তি করেন। ২০ লাখ টাকা সিকিউরিটি ও মাসে ২০ হাজার টাকা ভাড়ায় চুক্তি করেন। গত শনিবার অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি মহেশের নিকট সিকিউরিটি বাবদ ১০ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করেন। এ ঘটনা স্বর্ণপট্টিতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সকলেই জেনে যায় যে, ঢাকার বড় এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মন্দির মার্কেটের দোতলার বড় রুম ভাড়া নিয়েছে।
ঘটনার এ পর্যন্ত ঠিক ছিলো। অঘটন শুরু হয় শনিবার বেলা ১১টার পর থেকে। বেলা ১১টার পর আনোয়ার হোসেন নামে পরিচয়দানকারী ব্যক্তি সাধু খাঁ জুয়েলার্সে যায়। সাধুখাঁ জুয়েলার্সের মালিক বিশ্বজিৎ কুমার সাধু খাঁ জানান, ভদ্রলোক স্বর্ণের গয়না পছন্দ করে চেকের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করতে গেলে তিনি আপত্তি জানান। বলেন চেকের মাধ্যমে তিনি বেচাবিক্রি করেন না।
সাধুখাঁ জুয়েলার্স থেকে বের হয়ে পাশের গ্রামীণ জুয়েলার্সে যান। সেখানে বোনের বিয়ের জন্য গয়না দরকার জানিয়ে ক্যাটালগ দেখে গয়না পছন্দ শুরু করেন। গ্রামীণ জুয়েলার্সের মালিক প্রসাদ কুমার ঘোষ বলেন, এক পর্যায়ে ১৪ ভরি ওজনের বেশ কয়েকটি গয়না পছন্দ করেন। দাম হয় ৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। তিনি চেকে মূল্য পরিশোধ করতে চাইলে প্রসাদ কুমার ঘোষ সম্মত হননি। সে সময় প্রতারক তাকে ৩ লাখ টাকার চেক দিয়ে গয়নাগুলি পৃথক করে রাখতে বলেন। জানান, প্রতারকের বড় ভাই দেলোয়ার পরে টাকা দিয়ে গয়না ও চেক ফেরত নিয়ে যাবে। এরপরপরই প্রসাদ কুমার ঘোষ দোকান বন্ধ করে চেক হাতে বের হন। তাকে চেক হাতে দ্রুত বের হয়ে যেতে দেখে প্রতারক দ্রুত সটকে পড়ে। এরপর বড়ভাই পরিচয়দানকারী কথিত দেলোয়ার একইভাবে ফাতেমা জুয়েলার্সের মালিকের নিকট থেকে চেকের মাধ্যমে আড়াই ভরি স্বর্ণের গয়না হাতিয়ে নিয়ে যায়। দুপুরে শহরের অনেক পরিচিত ব্যবসায়ীর নিকট বিকাশে টাকা ধার চায়। প্রসাদ কুমার ঘোষ জানান, রবিবার ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার নিকট থেকে প্রতারক আনোয়ার ১০ হাজার টাকা বিকাশ দিতে অনুরোধ করেন। বিকাশ দিতে গিয়ে দেখতে পান একই দোকান থেকে ফাতেমা জুয়েলার্সের মালিক ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন আগেই। সে কারণে প্রসাদ ১০ হাজারের স্থলে ৫ হাজার বিকাশ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা দুজন ছাড়াও মহেশ কুমার ভৌতিকা ৮০ হাজার টাকার ওপরে বিকাশ দিয়েছেন।
এদিকে, প্রসাদ কুমার ঘোষ শনিবারই প্রতারকদের দেয়া ভিজিটিং কার্ডের ঠিকানায় যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন যে, তারা প্রতারক। বিষয়টি এলাকার সকল ব্যবসায়ীর মাঝে ছড়িয়ে দিলে অনেকেই প্রতারকচক্রের পাতা ফাঁদ থেকে বেঁচে যান। বর্তমানে প্রতারকদ্বয়ের মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ প্রতারণার কাহিনী এখন শহরের সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে।