গত ১১ বছরে রেলওয়ের বার্ষিক উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ১৬৫৮ শতাংশ। এ সময়ে রেলে বাড়তি বরাদ্দ দেয়া হয় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অনেক উন্নয়ন প্রকল্প এরই মধ্যে শেষ হয়েছে এবং চলমান রয়েছে আরও ৩৭টি উন্নয়ন প্রকল্প। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়। দ্রুতগতিসম্পন্ন অনেক কোচ এবং নতুন নতুন রেললাইন সম্প্রসারণ করা হয়। এতো কিছুর পরও রেল পরিবহন ভালোমতো চলছে না। ঠিক সময়ে গন্তব্যে আসা-যাওয়া করতে পারছে না, অর্থাৎ সিডিউল ঠিক রাখতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পশ্চিমাঞ্চল রেলে প্রতিটি ট্রেন চলছে ২ থেকে ৯ ঘণ্টা বিলম্বে। এভাবে আর যাই হোক কর্মজীবী ও সচেতন যাত্রীদের যে আকর্ষণ করা যাবে না, তা বলাই বাহুল্য। অথচ হওয়ার কথা ছিলো এর বিপরীত।
আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী পরিবহন হওয়ার কারণে ট্রেন হওয়ার কথা ছিলো মানুষের যাতায়াতের প্রথম পছন্দের পরিবহন। সরকারও সেটি সামনে রেখে অনেক প্রকল্প নিয়েছে; কিন্তু সেগুলো দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। রেলপথে যাত্রাকে নিরুৎসাহিত করার জন্য রেলওয়ের ভেতরে-বাইরের অনেক অদৃশ্য ‘কালোবিড়াল’ ওতপেতে থাকায় পরিস্থিতির উন্নয়ন হচ্ছে না। এ অবস্থায় লাখো কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও কেন রেল সঠিক পথে আসছে না, তা খুঁজে বের করে দ্রুত সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।
সরকারের মহাপরিকল্পনার কারণে রেলের যাত্রী বেড়েছে গত ১১ বছরে ৪২ শতাংশ; কিন্তু রেল এখনও লাভে ফিরতে পারেনি। এমনকি বিদেশ থেকে উন্নত মানের কোচ কেনার পরও সেগুলো চালু করা যায়নি। ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতির ট্রেনকে চলতে হচ্ছে ঘণ্টায় মাত্র ৬০ কিলোমিটার গতিতে। এর কারণ রেললাইনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, মিটার গেজ লাইনকে ডুয়েল গেজ লাইনে উন্নীত করতে না পারা ইত্যাদি। ফলে যাত্রী বাড়ার পরও লোকসান হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলের লোকসান ২২ হাজার কোটি টাকা, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে তীব্র সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে যাত্রীদের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। একদিকে যাত্রী বাড়ছে, অন্যদিকে রেলের লোকসান হচ্ছে- এটা কী করে সম্ভব তা আমাদের বোধগম্য নয়।
মূলত, রেলের টিকিট কাটতে সমস্যা, সিট খালি রেখেও টিকেট নেই বলে যাত্রীদের ফিরিয়ে দেয়া, সময়মতো গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করতে না পারা ইত্যাদি নিরাপদ ও মানসম্মত পরিবহন খাতটিকে সমস্যায় ফেলছে। রেলের অসাধু কর্তারা নিজেদের উন্নয়নে ব্যস্ত থাকেন, রেলের উন্নয়নে নয়। এর প্রমাণ পাওয়া যায় যাত্রী বাড়ার পরও লোকসান বাড়া এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় লোকসান দেয়া ট্রেন প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় অনেক লাভ দেয়ার ঘটনা থেকে। সরকার অনেক বরাদ্দ দেয়ার পর অর্থ খরচের জন্য ডেমু ট্রেন কেনা হয়, যা কাক্সিক্ষত কোনো ফল এনে দেয়নি। সিডিউল বিপর্যয় রোধ করে কাক্সিক্ষত গতিতে যথাসময়ে ট্রেন চালানো গেলে পরিস্থিতির উন্নয়ন অসম্ভব নয়। সরকারের কঠোর নজরদারিই পারে রেলকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে। বিপুল বিনিয়োগের সুফল কাজে লাগাতে হলে রেলের উন্নয়ন প্রকল্পের তদারকিতে ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে অবিলম্বে।