সামাজিক অবক্ষয় রুখতে হবে

সামাজিক ও নৈতিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করা হলে বলতে দ্বিধা নেই যে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র চরম অবক্ষয়ের শিকার। রাজনীতি, নীতি-আদর্শ, সামাজিক মূল্যবোধ—সব বিষয়ে অবক্ষয় চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। বিষয়টি রাষ্ট্রের জন্য, সমাজের জন্য সুখকর নয়। অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজে ও রাষ্ট্রে অনিয়ম-দুর্নীতি বাড়ে, রাজনীতিতে দুষ্টচক্রের অবস্থান পোক্ত হয়, আর্থিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা বাড়ে এবং অর্থ ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে যা করার নয় তা-ও করার বা করানোর বাসনা তৈরি হয়। এসবের ফলে সাধারণ মানুষ, দায়গ্রস্ত মানুষ ক্ষমতাবানদের, সম্পদশালীদের অনৈতিক, বেআইনি ‘হুকুম’ তামিল করতে বাধ্য হয়। সমাজ ও রাষ্ট্র স্বার্থপরতা, নীতিহীনতার নিগড়ে বন্দি হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা এমন দশারই স্মারক যেখানে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, লুটপাট নিত্য ও স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের এক ঘটনায় সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় এবং প্রতিপত্তিহীন সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ঋণগ্রস্ত এক বাবার ১৩ বছর বয়সের মেয়েকে এক বছর ধরে ধর্ষণ করেছে এক ঋণদাতা। জানা যায়, মেয়েটি কামরাঙ্গীর চরে বাবার সঙ্গে এক বাসায় থাকে। তার বাবা দোকানে কাজ করেন। বছরখানেক আগে তার কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা ঋণ নেন তিনি। সেই ঋণ তিনি শোধ করতে পারছিলেন না। একদিন ঋণদাতা বলেন, মেয়ের সঙ্গে ‘প্রেম’-এর সুযোগ দিলে টাকা ফেরত দিতে হবে না। পরিস্থিতির চাপে মেয়েটির বাবা রাজি হন। সেদিনই ঋণদাতা তার বাড়িতে যান। কিশোরী মেয়েটিকে তার কাছে যেতে বলেন বাবা। যেতে না চাইলে মারধর করে তাকে পাঠানো হয়। সেদিন মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন আবুল। প্রায় এক বছর ধরে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে শনিবার। মেনে নিতে না পেরে গত মঙ্গলবার প্রতিবেশী এক নারীকে বিষয়টি জানায় ওই মেয়ে। প্রতিবেশীর স্বামী পুলিশের সহযোগিতা চান। ওই দিন রাতে কামরাঙ্গীর চর থানার পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং তার বাবাকে আটক করে। একটি মামলা হয়েছে; মেয়েটির বাবা এখন কারাগারে। অভিযুক্ত মো. আবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিস্থিতির শিকার হলেও মেয়েটির বাবাকে সম্পূর্ণ দায়মুক্ত বলা যায় না। এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর একটিও না ঘটে সে জন্য এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এই অবক্ষয় রোধ করে সামাজিক উত্তরণের প্রক্রিয়াও সত্বর শুরু করা দরকার। আর এ জন্য সবার আগে দরকার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। সামাজিক অবক্ষয় রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।