স্টাফ রিপোর্টার: টঙ্গীর তুরাগতীরে শুক্রবার শুরু হয়েছে দাওয়াতে তাবলিগের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। বাদ ফজর মদিনা নিবাসী মাওলানা মুফতি ওসমানের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর দিনভর চলে বয়ান, তালিম, তাশকিলসহ বিভিন্ন আমল। দুপুরে জুমার জামাতে শরিক হন কয়েক লাখ মানুষ। জুমায় ইমামতি করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোশাররফ হোসেন। কাল দুপুরের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমা। এদিন ময়দানে জুমার জামাতে শরিক হন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, হেফাজতে ইসলামের সহসভাপতি মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। ইজতেমায় অংশ নেয়া মুসল্লিরা ছাড়াও ঢাকা ও গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার বহু মানুষ এদিন জুমার জামাতে শরিক হন। ময়দানের মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম জানান, বাদ ফজর মদিনা নিবাসী মাওলানা মুফতি ওসমান আম বয়ান করেন, তা বাংলায় তরজমা করে মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুর। সকাল সাড়ে ৯টায় তালিমের বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুফতি আসাদুল্লাহ, বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুফতি ওসামা ইসলাম। জুমার নামাজের আগে সালাতুত তাসবিহ নামাজের ফাজায়েল সম্পর্কে বয়ান করেন মাওলানা মুফতি ফয়জুর রহমান। বাদ জুমা বয়ান করেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মুরুব্বি মাওলানা চেরাগ উদ্দিন, তার বয়ান বাংলায় ভাষান্তর করেন বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফ আলী। বাদ আসর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা খান শাহাবুদ্দিন নাসিম। বাদ মাগরিব বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা জামশেদ, তা বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ। মো. সায়েম আরও জানান, বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাদ ফজর মাওলানা চেরাগ উদ্দিনের বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়ার কথা বিশ্ব ইজতেমা। তবে অসুস্থতাজনিত কারণে মাসোহারার মাধ্যমে তাকে জুমার পর বয়ান দেন মুরুব্বিরা।মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হচ্ছে। বিদেশি মেহমানরা মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করেন। বধিরদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে অনুবাদ করা হয় ইশারা ভাষায়। এ ছাড়াও শুক্রবার সকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের উদ্দেশে খাস বয়ান করা হয়। নামাজের মিম্বার থেকে ছাত্রদের উদ্দেশে খুসুশি বয়ান এবং ময়দানে আগত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য উত্তর-পূর্ব পাশের টিনশেড মসজিদে খাওয়াজের বয়ান করা হয়।
বয়ানে যা বলা হল : মাওলানা মুফতি ওসমান বলেন, ইজতেমাওয়ালাদের কাজ হল পরিপূর্ণভাবে দিনের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। নবী করিম (সা.) দাওয়াতের মেহনতের জন্যও মদিনা মনোয়ারায় হিজরত করেছিলেন। তারপর আবার নিজ এলাকায় এসে দাওয়াতের কাজ জিন্দা করেছিলেন। দাওয়াতের মাধ্যমে ইমানওয়ালা জিন্দেগি, আমলওয়ালা এবং সত্য ও সুন্দর জিন্দেগি তৈরি করতে হবে।
মুফতি ওসমান বলেন, দাওয়াতের কাজে জান ও মাল কোরবান করতে হবে। দাওয়াত গ্রহণকারী যত নেক আমল করবেন, সমান সওয়াব দাওয়াতদাতাও পাবেন। তিনি বলেন, দুনিয়ার জিন্দেগি অনিশ্চিত জিন্দেগি, অক্ষম জিন্দেগি। দুনিয়ার জিন্দেগি হল ধোঁকার জিন্দেগি। আর হাকিকতে জিন্দেগি হল আখেরাতের জিন্দেগি। আখেরাতের জিন্দেগি হল চিরস্থায়ী জিন্দেগি। অবশ্যই প্রত্যেক মানুষকে আখেরাতের জিন্দেগিতে যেতে হবে। একমাত্র হুজুর (সা.)-এর বাতানো তরিকায় দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও কামিয়াবি।
বিদেশি মুসল্লি : ৩১ দেশের ১ হাজার ৪৪১ জন বিদেশি মেহমান এ পর্বে (শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত) ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য। তবে আয়োজকদের দাবি এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। দেশি মুসল্লিদের মতো বিদেশি মুসল্লিরাও আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত আসতে থাকবেন।
তিন মুসল্লির মৃত্যু : দু’দিনে ইজতেমা ময়দানে তিন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার থানার চানপুর লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত হজরত আলীর ছেলে কাজী আলাউদ্দিন (৬৫), নরসিংদীর বেলাব থানার বিরবাঘরের চন্দনপুর গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের ছেলে সুরুজ মিয়া (৬০) ও গাইবান্ধার ফুলছড়ি থানার টেংরাকান্দি গ্রামের রমজান আলীর ছেলে গোলজার হোসেন (৪০)।
চিকিৎসাসেবা : শুক্রবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ঠাণ্ডাজনিত কারণে দুই শতাধিক মুসল্লি টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম, র্যাব, ইবনে সিনাসহ ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্পগুলোতে কয়েক হাজার মুসল্লি বিনা মূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ওষুধ নিয়েছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা পঞ্চগড়ের বোদা থানার বোয়ালমারী গ্রামের নূর মোহাম্মদ বলেন, সর্দি, কাশি ও মাথাব্যথায় ভুগছি। শরীর দুর্বল লাগে। ঢাকার কেরানীগঞ্জের বশির উদ্দিন (৪৫) জানান, মাথাব্যথা ও জ্বরের ওষুধ নিতে এসেছেন।
ময়দানের জিম্মাদার প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিবুল্লাহ বলেন, মুসল্লিরা নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমা।