মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের একটি কৃষি প্রধান এলাকা। আবাদি জমির প্রায় সবই দুই ফসলি ও তিন ফসলি। ৭১৬.০৮ বর্গ কি.মি. আয়তনের এ জেলার ঊর্বর ও সমতল এলাকা হওয়ায় ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা আলু, কচু, পেয়াজ, মরিচ, কলা ও সকল ধরনের শাক সবজিসহ সুস্বাদু আম, লিচু, কাঁঠাল উৎপাদন হয়। এলাকার মানুষের চাহিদা পূরণ করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে রপ্তানি করে অর্থ উপার্জন করে কৃষক। এজন্যই ঊর্বর জমি কৃষকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জেলায় অধিকাংশ জলাবদ্ধ এলাকাগুলোতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করলেও বর্তমানে ৩ ফসলি জমিতেও পুকুর করছে প্রভাবশালীরা।
জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা লঙ্ঘন করে এলাকার প্রভাবশালীরা নির্বিঘেœ ফসলি ঊর্বর কৃষি জমি নষ্ট করে ব্যাপক হারে পুকুর খনন করছে। মাঠের মাঝে পুকুর খনন করায় বর্ষা মরসুমে মাঠে জলাবদ্ধতা হবে। ফলে এলাকার সাধারণ জমির মালিকেরা চরমভাবে হতাশ। ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার পর তা পরিবহনের জন্য পাকা ও কাঁচা সড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটি বোঝাই ভারী যানবাহন চলাচল করায় রাস্তাগুলো ভেঙে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। আর সড়কগুলো নষ্ট হওয়ায় ভোগান্তি পোয়াচ্ছে এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ।
জেলার বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, আমাদের এই মাঠে বিভিন্ন ধরনের ফসল হয়; কিন্তু প্রভাবশালী লোকজন পুকুর করার নামে ইট ভাটায় মাটি বিক্রি করছেন। গভীরভাবে মাটি কাটতে ব্যবহার করা হচ্ছে স্কেভেটর মেশিন এবং জমির সীমানা ঘেষে মাটি কাটার কারণে পাশের জমি ভেঙে যাচ্ছে। জমি ভেঙে পুকরের ভেতরে যওয়ার ফলে ওই জমি মালিকও পুকুর করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকেই রাস্তার পাশের জমিতে রাস্তা ঘেষেই পুকুর কাটছে ভেঙে যাচ্ছে রাস্তা। কোথাও কোথাও দেখা গেছে মাঠের মাঝে প্রথমে গভীর পুকুর কাটা হয়েছে। পরবর্তীতে ওই পুকুরে ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। ফলে আবাদি জমির নিচ থেকে বালি সরে গিয়ে জমি বসে যাচ্ছে। কেউ কেউ অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
সদরে বাড়িবাঁকা গ্রামের মাঠে আসকার আলী ২ বিঘা জমিতে পুকুর কেটেছেন তবে ধানি জমিতে শ্রেণি পরির্বতন করে পুকুর করার জন্য অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানেন না। তিনি বলে কোলা গ্রামের মিজা নামের একজন পুকুর কেটে দিয়েছে সেই জানে অনুমতি আছে কিনা।
একই গ্রামের রাজ্জাকের বাড়ির পাশে উঁচু জমি কেটে গভীর গর্ত করে পুকুর করছে বর্ষা মরসুমে পুকুরের পাশের বাঁশঝাড় উপড়ে যাবে সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, রাজ্জাকের জমির মাটি কেটে চঞ্চল মিয়ার ইট ভাটায় নেয়া হচ্ছে। তবে পুকুর করার অনুমতিপত্র দেখে কাটছেন কিনা জানতে চাইলে মাটি কাটা স্কেভেটর মেশিনের মালিক হুমায়ন কবীর জানান আমরা ঘণ্টা চুক্তিতে মাটি কাটি গত বছর ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের জরিমানা করেছিলো তাই আমরা গাড়ির মালিকরা সমিতি করে জেলা প্রশাসকের এলআর ফান্ডে মোটা অংকের টাকা ( ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ শে মার্চ পালনের জন্য) ডোনেশন দিয়েই মাটি কাটি। তবে এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শরীফ উদ্দীন বলেছে পুকুর কারার অনুমতি আছে। তবে তিনি অনুমতির কাগজ দেখেননি বলে জানান। এ রকম অপকৌশলে নির্বিঘেœ পুকুর কেটেই চলেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার সমতল ভূমি ও আশে পাশের ফসলি জমি।
এছাড়াও গাংনী উপজেলার আড়পাড়া, মহিষাখোলা, ধানখোলা, জালশুকা, শিশির পাড়া, চিৎলা, বাঁশবাড়িয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে চলছে ইট ভাটায় মাটি বিক্রয় করে পুকুর খনন।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, মেহেরপুর জেলার জমি খুবই ঊর্বর এখানে সকল ফসলই ভালো হয়। তবে কেনো পুকুর কাটছে তা বুঝতে পারছি না। আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর কোনো ইট ভাটা, স্কেভেটর মেশিন বা অবৈধ কোনো কাজের জন্য কারো টাকা গ্রহণ করিনি। জেলা প্রশাসন থেকে কোনো ব্যক্তিকে পুকুর খননের অনুমতিও দেয়া হয়নি। খুব শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।