স্টাফ রিপোর্টার: ইহকালের শান্তি, পরকালের মাগফেরাত এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব। গতকাল রোববার বেলা ১১টা ৮মিনিট থেকে শুরু করে ১১টা ৪৬মিনিট পর্যন্ত মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের তাবলিগের প্রধান মারকাজ কাকরাইলের মুরব্বি হাফেজ মাওলানা জোবায়ের। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার প্রশংসা, হজরত রাসূলে কারিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পাঠের মাধ্যমে তিনি মোনাজাত শুরু করেন। মোনাজাতে তিনি ইজতেমার কামিয়াবি, অংশগ্রহণকারীসহ সব মুসলমানদের গোনাহ মাফ, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ, বিশ্বশান্তি, বিশ্ববাসীর সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। এ সময় লাখো মানুষের কান্নার আওয়াজে ইজতেমার ময়দানে এক অভূতপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আমিন আমিন ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে তুরাগ তীর। ধারণা করা হচ্ছে, ইজতেমার এই আখেরি মোনাজাতে প্রায় অর্ধকোটি মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছেন। ইজতেমার ইতিহাসে এবার প্রথমবারের মতো ময়দান থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত মাইকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আলহাজ জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্য, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। এর আগে বাদ ফজর ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে হেদায়েতি বয়ান পেশ করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। আখেরি মোনাজাতের আগে বিশেষ বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা।
এদিকে তিনদিনের জামাতের বাইরে সকালে আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ স্রোতের মতো ছুটে আসেন ইজতেমা ময়দানের দিকে। ফলে উত্তরে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা দক্ষিণে বিমানবন্দর থেকে টঙ্গীমুখী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া শাখা রোডগুলো থেকেও কোনো যানবাহন সড়কে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ।
ইজতেমার মুরব্বিদের সূত্রে জানা গেছে, ইজতেমায় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চাদ, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, পাকিস্থান, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, খিরগিজস্থান, মালয়েশিয়া, মরক্কো, নেপাল, কেনিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, জর্দান ও দুবাইসহ বিশ্বের ৬১টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৯শ’ বিদেশি মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।
টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আরও তিন মুসল্লি মারা গেছেন। শনিবার বিকেলে ও রাতে তাদের মৃত্যু হয়। এনিয়ে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় গত চারদিনে ১২ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালেও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে দুই পর্বে। প্রথম পর্ব ৮ জানুয়ারি শুরু হয়ে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে ১০ জানুয়ারি। দ্বিতীয়পর্ব ১৫ জানুয়ারি শুরু হয়ে শেষ হবে ১৭ জানুয়ারি। গতকাল রোববার সকালে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে বিশ্ব তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বিদের মাশওয়ারায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ১৭ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয়পর্ব। মাওলানা সাদ অনুসারীরা অংশ নেবেন দ্বিতীয় পর্বে।