বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ : জেকে বসেছে তীব্র শীত

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, কুড়িগ্রাম ও যশোরসহ তার পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। দুপুরে রোদের তীব্রতা কিছুটা বাড়লেও বিকেল হতে না হতে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে হাড়কাপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়ার ৫ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে রাতের তাপমাত্রা আরো কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে আকাশ কিছুটা মেঘলা থাকলেও আবহাওয়া প্রধানত সুষ্ক থাকবে। তবে দেশের উত্তরাঞ্চরে হালকা বৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল সোমবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিলো রাজশাহীতে ৮ দশমিক ৮। চুয়াডাঙ্গায় ছিলো ৯ দশমিক শূণ্য। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকাল টেকনাফে ২৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেট ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এদিকে চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীতে আবারও খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তরফে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট চুয়াডাঙ্গা ইউনিটও এবার শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। সদস্যদের মাধ্যমে আগামীকাল বুধবার থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে জানানো হয়েছে। অপরদিকে মাঝে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কুমড়ো বড়ি দেয়ার ধূমে কিছুটা ভাটা পড়লেও গতকাল থেকে আবার অনেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। রাতে তীব্র শীত আর দিনে ঝলমোলে রোদই কুমড়ো কলাইয়ের বড়ি দেয়ার আদর্শ সময়। গতকাল থেকে এরকম আবহাওয়ায় ফুটে উঠতে শুরু করেছে।

ডিঙ্গেদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা সদরের মাখালডাঙ্গা গ্রামে হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় মাখালডাঙ্গা বাজারে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করে মাখালডাঙ্গা শুভেচ্ছা পল্লী উন্নয়ন সংস্থা। সমাজসেবক হোসেন আলির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আরশাদ উদ্দিন চন্দন। তিনি বলেন, শুভেচ্ছা পল্লী উন্নয়ন সংস্থার শীতবস্ত্র কম্বল পেয়ে এলাকার অনেক হতদরিদ্র মানুষ উপকৃত হবে। এদের মতো এ শীতে দরিদ্রদের পাশে এলাকার বিত্তবান এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আনারুল হকের উপস্থাপনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপপরিচালক মাসুম আহাম্মেদ, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিলি আলম, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার জাহাঙ্গীর আলম, মাখালডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ শাহা, সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সিএস আসাদুজ্জামান আসাদ, সংস্থার সভাপতি হাশেম আলি প্রমুখ। শেষে ২২০জন শীতার্ত হতদরিদ্র মানুষের মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয় এবং এ বছর মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া মাখালডাঙ্গা গ্রামের সেলিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মোতালেবকে সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যাগ প্রদান করা হয়।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন উদ্যোগে দরিদ্র শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে। গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় আলমডাঙ্গা আনন্দধাম পুরাতন বাজার জামে মসজিদের সামনে ৩০০ গরিব দুস্থের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেয়া হয়। আলমডাঙ্গা শহরের কুমার নদের দু’পাড়ের জায়গা থেকে যেসব পরিবার উঠে গেছে তাদের মধ্যে থেকে ছিন্নমুল গৃহহীন পরিবার বাছাই করে আস সুন্না ফাউন্ডেশন শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। শীতবস্ত্র বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা বণিক সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন, আনন্দধাম বাইতুল মামুর মসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা ইমদাদুল হক, প্রাণিসম্পদ ডা. সিরাজুল হক, পৌর কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম স্বপন, বস্ত্রব্যবসায়ী আশরাফুল হোসেন বাবু, মাহফিল উদ্দীন মানিক, মিজানুর রহমান, ইলিয়াস আহমেদ সিদ্দিকি, ফিরোজ আহমেদ, নাদিউজ্জামান খান রিজভি, জিনারুল ইসলাম প্রমুখ।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলার হাসাদাহ মডেল কামিল মাদরাসান এতিম খানার এতিম শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল সোমবার এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। শীতবস্ত্র বিতরণকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, বর্তমান সরকার জনবান্ধব সরকার। জনগণের জীবন মানের উন্নয়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই শীতে অসহায়, হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও এতিম শিশুরা যাতে কষ্ট না পায় সে লক্ষ্যে সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ হতে গরিব মানুষকে সহায়তা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এতিম শিশুরা এই শীতে যাতে কষ্ট না পায় সে দিকে সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
শীতবস্ত্র বিতরণকালে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম, হাসাদাহ মডেল কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাও. মো. আক্তারুজ্জামান, শিক্ষক মাও. আব্দুল বারী, ম্যানেজিং কমিটির কুতুব উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার এতিম শিশুদের হাতে কম্বল ও জ্যাকেট তুলে দেন।
অপরদিকে, জীবননগর উপজেলার উথলী ও বাঁকা ইউনিয়নের অসহায় প্রবীণদের মাঝে শীতবস্ত্র, সহায়ক উপকরণ লাঠি, হুইল চেয়ার ও বয়স্কভাতা প্রদান করা হয়েছে। গতকাল সোমবার এ দুটি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে চার শত দরিদ্র মানুষের হাতে এ উপকরণ তুলে দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। বাঁকা ইউনিয়ন প্রবীণ কমিটির সভাপতি আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে বাঁকায় ও উথলী ইউনিয়ন প্রবীণ কমিটির সভাপতি দাউদ হোসেনের সভাপতিত্বে উথলীতে আয়োজিত পৃথক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইউএনও সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোর্তুজা, সমৃদ্ধি কর্মসূচির সমন্বয়কারী আনিসুর রহমান, প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মুন্সী মাহবুবুর রহমান বাবু, বাঁকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন ফরজ, উথলী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, উথলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নান, সাবেক ইউপি সদস্য শাহাবুদ্দিন মালিতা ও বাঁকা ইউনিয়ন প্রবীণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান।
বাঁকা ইউনিয়ন সমৃদ্ধি কর্মসূচির সমন্বয়কারী নুঝাত পারভীনের সঞ্চালনায় ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সমৃদ্ধি কর্মসূচি ও প্রবীণদের জীবনমান কর্মসূচি কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ দুটি ইউনিয়নের ২১০ জন প্রবীণকে কম্বল, ১২০ জনকে লাঠি, ৪ জনকে হুইল চেয়ার, ১০০ জনকে বয়স্কভাতা, ৬ জন প্রবীণকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও ৬ জন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।