স্টাফ রিপোর্টার: মুসলিমবিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুরু হচ্ছে ১০ জানুয়ারি। ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এর প্রথম পর্ব শেষ হবে। ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে তা শেষ হবে ১৯ জানুয়ারি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ইজতেমা ময়দানে এক সভায় এ তথ্য জানিয়ে ইজতেমার প্রস্তুতির তথ্য তুলে ধরা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক যে, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে তাবলিগ জামাতের লোকজন দ্বিধাবিভক্ত, তাদের মধ্যে মতপার্থক্য হয়েছে। যত মতপার্থক্যই হোক, বাংলাদেশেই বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যাতে কোনো কষ্ট না হয়, এর জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশি মেহমানদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে তা যাচাই-বাছাই করে ভিসা দেয়া হবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ‘৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম অবহিতকরণ ও আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামালের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন, গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির অন্যতম মুরুব্বি (মাওলানা জুবায়েরপন্থী) প্রকৌশলী মেজবাহ উদ্দিন, মাওলানা ওয়াসিকুল ইসলাম (মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভীপন্থী) প্রমুখ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মতপার্থক্য থাকলেও সুন্দরভাবে এক জায়গায় ইজতেমা করার বিষয়ে তারা একমত। বিদেশি মেহমানদের অন-এরাইভাল ভিসা বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভিসার একটি নিয়মনীতি আছে, নিয়মনীতির মধ্যে থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা দরকার, সেটুকু আমরা করবো।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, বিশ্বের মুসলমানরা বিশ্ব ইজতেমার নাম অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে নেন। গত বছর সবার চেষ্টায় দুই পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তির পর এক প্যান্ডেলের নিচে ইজতেমা হয়েছে। এবার কোনোরকম বিশৃঙ্খলার আওয়াজ পাইনি। আশা করছি, এবারও বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।
মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, ইজতেমার প্রস্তুতিতে সিটি কর্পোরেশনের ২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। ইজতেমা উপলক্ষে সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
মাওলানা সাদের সঙ্গে মতবিরোধ আদর্শিক কারণে : রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে বৃহস্পতিবার মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন তাবলিগের কয়েকজন মুরুব্বি। ‘তাবলিগ জামাতের চলমান পরিস্থিতি ও বিশ্ব ইজতেমা-২০২০ এর প্রস্তুতি’ শীর্ষক ওই সভায় ছিলেন মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মাওলানা আমানুল হক, ক্যাপ্টেন ইফতেখার আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার আনিসুর রহমান প্রমুখ।
মুরুব্বিরা বলেন, তাবলিগের সংকটের মূলে রয়েছে যৌথ নেতৃত্ব তথা পরামর্শভিত্তিক পদ্ধতি বাদ দিয়ে একক নেতৃত্বে কাজ চালানো, মনগড়া নানা মন্তব্যে মাওলানা সাদের অনঢ় থাকা, পূর্ববর্তী তিন হজরতজির (আমীর) কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়া। একজন মাওলানা সাদের সঙ্গে বিশ্বের অন্য মুরুব্বিদের মতবিরোধ নেতৃত্ব নিয়ে নয়, আদর্শিক কারণে। তারা বলেন, বাংলাদেশে অনেকে তাবলিগের সংকটকে সাদপন্থী ও জুবায়েরপন্থী বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন, এটাও ভুল। কারণ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাবলিগ পরিচালিত হচ্ছে যৌথ নেতৃত্ব তথা শূরার মাধ্যমে। এখানে একক কেউ নেই।
তারা বলেন, দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজ থেকেই প্রথম সাদবিরোধিতা শুরু হয়। পরে দারুল উলুম দেওবন্দও এ ব্যাপারে ফতোয়া দেয়। সেই ফতোয়ার ভিত্তিতেই বাংলাদেশের আলেমরা সাদ সাহেবের ভ্রান্ত মতাদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
এ মুরুব্বিরা দাবি করেন, এবার তাবলিগ জামাতের ইজতেমা এক পর্বেই হচ্ছে। আর সেটা ১০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। পরের সপ্তাহে মাওলানা সাদের অনুসারীরা ইজতেমা করলেও সেটা দ্বিতীয় পর্ব নয়।