প্রতি বছরের মতো চলতি বছরের প্রথম দিন সারাদেশে ‘বই উৎসব’ পালিত হয়েছে। বছরের প্রথম দিন দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই বিতরণ শেখ হাসিনা সরকারের বড় কৃতিত্ব। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য ৩৫ কোটি ৩১ লাখেরও বেশি নতুন বই বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ কোটি ৫৪ লাখ ২ হাজার ৩৭৫টি বই এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ২৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ১৭৯টি বই। এতোসংখ্যক ছেলেমেয়ের শিক্ষাদীক্ষায় সরকারি সুবিধা নিশ্চিত করা সহজ বিষয় নয়। তারপরও এ নিয়ে সরকার টানা ১১ বছর শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই বিতরণ করলো। সংগত কারণে এই ‘বই উৎসব’ উদযাপনযোগ্য। বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পেয়ে নতুন স্বপ্নের হাতছানিতে এগিয়ে যায় আমাদের দেশে ছেলে-মেয়েরা। এতো শিশুর হাতে একসঙ্গে বই তুলে দেয়া নিঃসন্দেহে এক মহাযজ্ঞ। সরকারের পক্ষ থেকে এটিকে ‘বই উৎসব’ বলা হয়। আর এই অভিধাকে অত্যুক্তি বলারও অবকাশ নেই। তবে সরকারি বিনামূল্যের এই বই ছাপা নিয়ে নানা সময়ের প্রশ্ন উঠেছে। বই বিতরণের সময় অতীতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে। এবারও যথা সময়ে বই ছাপা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিলো, গণমাধ্যমে এসেছিলো এমন খবর। এরপরও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সব বাধা কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে এতো বড় মহাযজ্ঞের সাফল্য যাতে কলঙ্কিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়ার আগে থেকেই কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করা।
অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, বছরের প্রথম দিন নতুন বইপ্রাপ্তির মধ্যদিয়ে দেশের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের আনন্দের ঝিলিক চোখে পড়ে। নতুন বই হাতে পাওয়ার আনন্দই আলাদা। ২০১৭ সাল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্রেইল বই, পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য তাদের নিজেদের ভাষায় লেখা প্রাক-প্রাথমিকের বই ও শিক্ষা উপকরণ এবং শিক্ষকদের শিক্ষক নির্দেশিকা বিতরণ শুরু হয়। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রতি বছর বই বিতরণ ঘিরে যে উৎসব তা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক বাড়তি আনন্দ যোগ করে। তবে বিনামূল্যের বই কালোবাজারে বিক্রির ঘটনা প্রতি বছরই সামনে আসে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজরদারি বাড়াতে হবে।
এটা সত্য, গত ১১ বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সফলতা এসেছে আমাদের। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। শিক্ষা যে দারিদ্র্যমুক্তির একটি প্রধান দিক তাও প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশে। দেশের শিক্ষা খাতে এটি সরকারের একটি অন্যতম সাফল্য। বিনামূল্যের বই বিতরণ শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই মহৎ উদ্যোগের পূর্ণাঙ্গ সফলতার জন্য শিক্ষা এবং শিক্ষা উপকরণের মানের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। দেশে শিক্ষা বিকাশে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষা উপকরণ পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা হতে হবে যুগোপযোগী, আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত। এ ছাড়াও নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরির দিকেও সমান গুরুত্ব দেয়া সমীচীন।