নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কাঁচাবাজারের অবস্থাও তথৈবচ। গত কয়েক মাস ধরে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শাকসবজির দামও। বাজারে মৌসুমি সবজির সরবরাহ ঘাটতি না থাকলেও দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়সাধ্যের বাইরে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সবজি চাষও হয়েছে। তারপরও ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম কেন এতো বেশি- ভোক্তাদের এ প্রশ্নের উত্তর মেলে না। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর সবজির আবাদ বাড়ছে; কিন্তু কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। কৃষকবান্ধব বাজার ও বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলা আজও সম্ভব হয়নি বিধায় উৎপাদক ও ভোক্তা কেউই অধিক উৎপাদনেরও সুফল পাচ্ছেন না। মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি বাজার পর্যন্ত স্তরে স্তরে রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষির সবজি বিপ্লবের সুফল ভোগ করছে মধ্যস্বত্বভোগীরাই। উৎপাদক থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছুতে যে দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়, এর মধ্যে প্রায় সবজির দামই পাঁচ-ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এই বর্ধিত দাম যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। শ্রেণিটি খুব বড় না হলেও তারা যে শক্তিশালী, বিদ্যমান পরিস্থিতি এরই সাক্ষ্যবহ। পাইকারি বাজারে কখন সবজিবাহী পরিবহন পৌঁছুবে তা যেমন এই শ্রেণিটি স্থির করে দেয়, তেমনি কোন দামে খুচরা বাজারে পণ্য বিক্রি হবে, তা নির্ধারণ করাও যেন এই শ্রেণিটিরই ‘অধিকারভুক্ত’। কৃত্রিম সংকটের হোতাও তারাই। কৃষকের পাশে থাকার কথাটি মেঠো বক্তৃতায় যতো জোরের সঙ্গে উচ্চারিত হয়, কার্যক্ষেত্রে ছবিটি তার বিপ্রতীপ। কৃষিক্ষেত্রে সংগঠিত বিপণনই সমাধানের একটি বড় উপায়। সমবায় ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতিও মনোযোগী হতে হবে। এতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়েরই কল্যাণও হবে। লাগামহীন বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জোরদার করা চাই তদারকি ব্যবস্থা।