গাংনী প্রতিনিধি: আগামী ২৭ অক্টোবর মেহেরপুর গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিকী সম্মেলন অনুষ্ঠান নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। সম্মেলন সফল করতে সকলের সহযোগিতা চাইলেন গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন। আওয়ামী লীগ নামধারী কিছু ব্যক্তি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংকটে পড়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মধ্যদিয়ে সম্মেলনে বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন সাহিদুজ্জামান খোকন। গতকাল সোমবার সকালে গাংনীস্থ বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উল্লেখ করে সবাইকে সজাগ থাকার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম, আ.লীগ নেতা মনিরুজ্জামান আতু ও আলী আজগরসহ নেতৃবৃন্দ।
বক্তৃতায় মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে সম্মেলন সম্পন্ন করা হয়েছিলো। যে নেতৃত্ব সংসদ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ী করার মধ্যদিয়ে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। অথচ আজ যারা ষড়যন্ত্র করছে তারা আওয়ামী লীগের মঙ্গল চায় না। তারা কখনো নৌকায় ভোট দেয়নি।
যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন কর্তৃক সাইনবোর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই আমাকে অনেক কিছু করতে বলেছেন। কিন্তু আমি তো দায়িত্বে আছি। আমি শান্তি চাই। আমাদের কর্মীদেরকে নানাভাবে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। মানুষকে শান্তিতে রাখতে হলে নিজে অবশ্যই শান্তিপ্রিয় হতে হয়।
গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা দিক তুলে তিনি বলেন, গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছে। এখানে শাখা ও কলেজ খুলে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আজকে দুর্নীতি করতে করতে জিহ্বে আটা বসে গেছে। এখন সভাপতি পদে থাকতে না পেরে গায়ে জ্বালা ধরেছে। এটা কেন্দ্র করেই সে আজকে আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে বেড়াচ্ছে। শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছেন। সকল দুর্নীতিবাজের বিচার হবে। আমি যদি দুর্নীতি করি আমিও ছাড় পাবো না। মোশাররফ হোসেনের বিভিন্ন শহরে বাড়ি, মার্কেট ও গাড়িসহ সম্পদের পাহাড় কিভাবে হয়েছে তা গাংনীর মানুষ জানেন। সে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে যে দুর্নীতি করেছে তাও সবার জানা। শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্যই আমি তার মতো দুর্নীতিবাজকে সভাপতি হিসেবে সমর্থন করিনি।
সাবেক এমপি মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগ ধ্বংসের চেষ্টা করেছেন অভিযোগ করে সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে মকবুল হোসেন ও মোশাররফ হোসেনসহ তাদের কিছু লোক নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করে আসছে। দীর্ঘ ৩২ বছর পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকার বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন গাংনীর মানুষ। এই হিংসায় তারা জ্বলছে। আওয়ামী লীগ ধ্বংসের পাঁয়তারায় তারা মত্ত। মকবুল হোসেনসহ তার পরিবার দুর্নীতিতে আপাদমস্তক মগ্ন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি নিয়োগ দেয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে তিনি টাকা নিয়েছেন। আমার কাছে প্রতিদিনিই ভুক্তভোগীরা আসেন। এই দুর্নীতিবাজরা তাদের দুর্নীতি ঢাকতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় তিন যুগের রাজনৈতিক জীবনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ দয়া ও মায়া করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে আমাকে বসাইনি। কাউন্সিলরদের গোপন ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছি। তারা আমাকে যোগ্য মনে করেছিলেন তাই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এবারও যোগ্য মনে করলে তারা আমাকে ভোট দেবে নয় তো দেবে না। আমি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দায়িত্ব নিতে চাই না। রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও কর্মকা-ে কেউ দেউলিয়া হলে চোখে অন্ধকার দেখে। তখন নেতৃত্ব ধরে রাখার জন্য পেছন থেকে ষড়যন্ত্র করে। এসব ষড়যন্ত্র ছিলো ও থাকবে। সকল ষড়যন্ত্র কঠোরভাবে মোকাবেলা করেই আগামী সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হবে ইনশাল্লাহ।
এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নে সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা যে সমস্যাগুলো তুলে ধরছেন তা আমি সংসদে উত্থাপন করে সমাধানের চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাংনীতে কর্মরত বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। মতবিনিমিয়সভার দ্বিতীয় পর্বে উপস্থিত সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।