স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে আকন্দবাড়িয়ার দুজনকে আটক করে মারপিট ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্ধলাখ টাকা উৎকোচ বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে। সে অভিযোগের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বিষয়টি তদন্ত করা হয়। তদন্তে এসআই বিএম আফজালের অর্ধলাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের তথ্য প্রমাণ মেলে। তারই প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত আফজাল হোসেনকে রোববার বিকেলে ক্যাম্প থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ঘুষের বাকি ৪০ হাজার টাকা ফেরত পায়নি ভুক্তভোগী পরিবার।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হিজলগাড়ি পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই বিএম আফজাল হোসেন গত ৩০ আগস্ট রাত ৯টার দিকে কোটালী-উজলপুর সড়কের শৈলমারী মোড় নামক স্থান থেকে আকন্দবাড়িয়া গ্রামের শাজাহানের ছেলে বিল্লাল হোসেন এবং ই¯্রাফিলের ছেলে পিল্টুকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে পরিবারের লোকজনের সামনে তাদের মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং মামলা হালকা করার কথা বলে নগদ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেন তিনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের দৃষ্টিগোচরে আসলে অবস্থা বেগতিক বুঝে এসআই আফজাল হোসেন ঘুষের ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ১০ হাজার টাকা ফেরত দেন। বাকি টাকা গত ৪ সেপ্টেম্বর ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এদিকে দেড়মাস অতিবাহিত হতে চললেও প্রতিশ্রুতির টাকা ফেরত দিতে গড়িমশি শুরু করে দেয় আফজাল হোসেন। টাকা ফেরত না পেয়ে বিল্লালের মা জাহেরা বেগম বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করতে থাকেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করেন। তদন্তে অভিযোগকারী এবং সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদে এসআই আফজালের ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মেলে। একটি সূত্র জানায়, যখন তদন্ত কাজ চলছিলো এসআই আফজাল হোসেন বাদী এবং সাক্ষীদের বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালায়। তদন্তকারী কর্মকর্তার বিচক্ষণতা এবং দুরদর্শিতার কাছে তা ভেস্তে যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাক্ষীদের কয়েকজন জানান, মিথ্যা অভিযোগ তুলে হিজলগাড়ি পুলিশ বিল্লাল ও পিল্টুকে আটক করে। আমাদেরকে খবর দিয়ে ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেবার প্রতিশ্রুতিতে ৫০ হাজার টাকা নেয়। পরে জানতে পারি টাকা নিয়ে শুধু বেঈমানীই করেননি তাদেরকে ফেনসিডিল দিয়ে চালান পর্যন্ত দিয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করতে আসলে প্রথমে আমরা ভয় পেলেও পরে সব সত্য প্রকাশ করে দেয়। তারা আরও বলেন, এ ঘটনার আগেও এসআই আফজাল বেগমপুর ক্যাম্পে থাকাকালীন সময় অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটায়। তৎকালীন পুলিশ সুপার মাহাবুবুর রহমান বিষয়টি জানতে পেরে সাথে সাথে বেগমপুর থেকে বদলি করে নেন। তবে এখনও ঘুষের বাকি ৪০ হাজার টাকা ফেরত পায়নি ভুক্তোভোগী বিল্লালের পরিবার। এদের মধ্যে মিথ্যা মামলার শিকার পিল্টু জামিনে বাড়ি ফিরতে পারলেও বিল্লাল রয়েছে জেলে।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের এক তদন্তে এসআই আফজালের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ প্রাথমিকভাবে পাওয়ার কারণে তাকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনৈতিক ও অনুমোদনহীন কার্যকলাপের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সে কারণে গত রোববার বিকেলে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নিয়ে আনা হয়েছে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।