বিনোদন ডেস্ক: চলচ্চিত্রশিল্পী সমিতির নির্বাচনকে বরাবরই এক ধরনের উৎসব বলে আলোচনা করা হলেও অবস্থাদৃষ্টে সেই উৎসব উচ্ছ্বাসের কোনো নমুনা নেই। ক্রমাগতভাবে শিল্পীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে নিজেদের সম্পর্কগুলো বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে। শিল্পী সমিতির বিদায়ী সভাপতি অভিনেতা মিশা সওদাগর জাগো এফএম লাইভ অনুষ্ঠানের রাতাড্ডায় বলেছিলেন, তাদের নির্বাচনী ইশতিহারে সমিতির জন্য ফান্ড তৈরির ইচ্ছে থাকলেও শিল্পীদের অসহযোগিতার জন্য ফান্ড তৈরি করতে পারেননি। মিশা বলেন, ‘আমরা অনুষ্ঠান করেছি। সদস্য তারকাদের বলেছি টাকা না নিতে। তখন তারা বলেছে অমুক নিচ্ছে তো আমি কেন নেবো না।’ নারায়ণগঞ্জের ড্রিমল্যান্ডের একটি প্রোগ্রামে পারফর্ম করার জন্য নায়ক ফেরদৌস নাকি ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। তার সঙ্গে রিয়াজ ও পপিকেও একই পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়েছে। সমিতির কমিটির সদস্য এবং একজন সিনিয়র শিল্পী হওয়া সত্ত্বেও তারা শিল্পীদের ফান্ড গঠনের টাকায় পারিশ্রমিক নিয়েছেন বলে দাবি বিদায়ী সভাপতি ও সেক্রেটারির। আর এ প্রসঙ্গেই বিরক্তি প্রকাশ করেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘কোনো প্রোগ্রামের জন্য আমার পারিশ্রমিক কি ৫০ হাজার টাকা? ওরা কী বোঝাতে চায়? আমি একটা প্রোগামে গেলে কত টাকা সম্মানী নেই সেটা যারা আমাকে নেন তারা সবাই জানেন। আমি মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে শো করবো কেন? এখান থেকেই তো বোঝা যায় এটা ভিত্তিহীন একটি প্রচারণা। তারা কী প্রমাণ দিতে পারবে আমি এই টাকা সম্মানী নিয়েছি?’ ফেরদৌস আরো বলেন, ‘মুখ দিয়ে অনেক কথা বলা যায়। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া কথা বলা ঠিক না। আমি আর এই সমিতির বিষয়গুলো নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। এই বিষয়ে আসলে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। বিরক্তি লেগে গেছে। অযথাই কিছু মানুষকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কার ভাগ্যে কী আছে সেটা সময় বলবে। আমি অপেক্ষায় থাকলাম।’ এদিকে গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জায়েদ খান অভিযোগ তুলে বলেন, ‘ওনারা সমিতির তহবিল নিয়ে বড় বড় কথা বলে। ২ বছরে তারা একটি পয়সাও তহবিলে দেননি। কোথাও থেকে আনেনওনি। তাদের কী অবদান আছে সমিতিতে? কেউ মারা গেলেও তারা আসেননি, কোনো মিলাদেও অংশ নেননি।’
এ প্রসঙ্গে রিয়াজ বলেন, ‘আমি খুবই অবাক হচ্ছি এ রকম মিথ্যাচার দেখে। ভদ্রতা-ধৈর্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর সময় চলে এসেছে। আমি বা ফেরদৌস বা পপি—কেউ কি ৫০ হাজার টাকা পারিশ্রমিকের শিল্পী? এমন স্বস্তা হলে তো দিনে চারটা করে শো করতে পারতাম। সবাইকে নিজেদের মাপের মনে করে ওরা? আছে কোনো রশিদ সেই টাকা নেওয়ার? ঘটনা হলো নারায়ণগঞ্জের সেই শোটি ছিল ৮ লাখ টাকা বাজেটের। তার মধ্যে ৪ লাখ টাকা শিল্পী সমিতির ফান্ডে জমা হয়েছে। আর বাকি ৪ লাখ টাকা যারা পারফর্ম করেছে তাদের দেওয়া হয়েছে। সেটা কিন্তু পারিশ্রমিক হিসেবে নয়। ড্রেস ও অন্যান্য বাবদ। আর তা নির্ধারণ করা হয়েছে সবাই মিলেই। তো আমি, ফেরদৌস ও পপি যদি ৫০ হাজার করে দেড় লাখ টাকা নিয়ে থাকি তাহলে বাকি আড়াই লাখ টাকা কোথায়? সেগুলো কে নিয়েছে? সেদিন অনুষ্ঠানে আমি, ফেরদৌস, পপি, অপু বিশ্বাস ও জায়েদ খান পারফর্ম করি। মিশা সওদাগর অনুষ্ঠানেই যাননি। তাহলে মিশা কেমন করে বলেন যে, আমি কোনো টাকা নিইনি। সে তো ওখানে যায়নি। টাকা নেওয়ার প্রশ্ন আসবে কোথা থেকে? মিথ্যাচারের তো একটা লিমিট থাকা উচিত। তারা এত চমৎকার করে মিথ্যে কথা বলতে পারে শুনলে মনে হবে এর চেয়ে সত্যি কিছু নেই। ক্ষমতায় বসার পর প্রতিটি মিটিংয়ে গিয়েছি। আমি মিলাদ মাহফিলে বা শোক দিবসে গিয়েছি কি-না সেই প্রমাণ তো গণমাধ্যমে আছে। জায়েদের নিজের হাতে আপলোড করা ফেসবুকের ছবিও আছে। গত ২ বছরে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। সবগুলোতে আমার অংশগ্রহণ ছিল। অন্যদেরও অংশগ্রহণ ছিল।’
চিত্রনায়ক রিয়াজ আরো বলেন, ‘তারা নির্বাচন করছে করুক। প্রশ্ন তুললে অনেক তোলা যাবে। কিন্তু যে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি ওরা করছে সেটার ফল তাদের ভোগ করতে হবে। তারা বলে নানা উন্নয়নে ফান্ডের টাকা খরচ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ২ বছরে ৫৮ লাখেরও বেশি টাকা এসেছে। কোন খাতে কত খরচ হয়েছে আছে তার কোনো হিসেব আছে? কোনো কাগজ আছে? মুখে বললে তো হবে না। এখানে অনেক টাকার ব্যাপার। এটা কমিটির সদস্যরা চাইলে অন্যায়? তুমি যদি সৎ থাকো তাহলে কিসের এত ভয়?’
একই অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন চিত্রনায়িকা পপিও। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আসলে গত ২ বছরে সমিতির সঙ্গে থেকে ও অনেককিছু দেখে নির্বাচনের ইচ্ছেটা মরে গেছে। যেটা বুঝেছি তারা দুজন নিজেদের কোরাম আগে থেকেই ঠিক করে নিয়েছে। যারা ন্যায্য কথা বলে, যারা অনিয়ম হলে প্রতিবাদ করে তারা সমিতিতে নেতৃত্বে আসুক এটা তারা চায় না।’ এ অবস্থায় নির্বাচনকে ঘিরে পারস্পরিক পুরোনো অন্যায় অভিযোগ আর প্রতিবাদের মিছিল তৈরি হচ্ছে ক্রমশ!