জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের আরও কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠেছে, যা মোটেই কাম্য নয়। স্মরণ করা যেতে পারে, কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছিলো। জনগণের ট্যাক্সের ————————–টাকায় পরিচালিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এ ধরনের ঘটনা কোনোমতেই মেনে নেয়া যায় না। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণে আড়াই কোটি টাকা লোপাটসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি, নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্য এবং নারী কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের সূচনা ঘটান। অন্দোলনের একপর্যায়ে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ ও হল ত্যাগের নির্দেশ আসার এ সিদ্ধান্তে অনেক শিক্ষার্থী, বিশেষ করে গোপালগঞ্জে যাদের আত্মীয়-স্বজন নেই; তারা বিপাকে পড়েছেন, তা বলাইবাহুল্য। শুধু গোপালগঞ্জের বশেমুরবিপ্রবি নয়; দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় হঠাৎ বন্ধ ঘোষণা ও আবাসিক হলত্যাগে বাধ্য হওয়া শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়ার আগে কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষার্থীদের অসহায়ত্বের বিষয়টি মাথায় রাখা। অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় রাজনৈতিক পরিচয়, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষের বিনিময়ে অযোগ্য শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। এতে একদিকে অদক্ষ ও দলবাজদের ভিড়ে সাধারণ প্রশাসনে যেমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে; অন্যদিকে অযোগ্য ও মেধাহীন শিক্ষকের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ছে। এ থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজা জরুরি।
একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশেষ সুনাম ও মর্যাদা ছিলো। সুনাম ও মর্যাদার বিষয়টি দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিলো। দুঃখজনক হল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অতীত গৌরব ও ঐতিহ্যের কোনোকিছুই আজ আর অবশিষ্ট নেই। এর কারণ সম্ভবত এই যে, ছাত্র রাজনীতির দৌরাত্ম্য ও ঢালাওভাবে সবকিছুর দলীয়করণ। বর্তমানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে শুরু করে শিক্ষকসহ অন্যান্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার অধিকাংশই সম্পন্ন হয় দলীয় বিবেচনায়। দলের প্রয়োজনে নিয়োগপ্রাপ্তরা লাঠিয়াল বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াসহ অন্যান্য অনৈতিক কাজকর্মে জড়াতেও দ্বিধা করেন না। অন্যদিকে অলাভজনক ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও কৌশলে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওজি) বা মালিক পক্ষ অনেকটা পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের মতো এগুলো চালাচ্ছেন।
বস্তুত উচ্চশিক্ষার নামে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অবাধে দুর্নীতি, অনিয়ম, ভর্তি ও সনদবাণিজ্য চালালেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে মাঝে-মধ্যে দু-একটি সতর্কবার্তা জারি করা ছাড়া দৃশ্যমান আর কোনো পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। ফলে বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে নানারকম অনিয়ম ও দুর্নীতি। মালিকানা দ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে নামকাওয়াস্তে পাঠদান, কোচিং সেন্টারের আদলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা, ভাড়ায় শিক্ষক এনে জোড়াতালির ক্যাম্পাস পরিচালনা, সনদ বিক্রি, ক্যাম্পাস ও শাখা বিক্রিসহ এমনসব কীর্তিকলাপ সেখানে চলছে, যা এক কথায় ভয়াবহ। দেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে এরকম নৈরাজ্য চলার সংবাদে শঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই। কী সরকারি, কী বেসরকারি- দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে এ অরাজকতার অবসান ঘটানো জরুরি।

Leave a comment