চুয়াডাঙ্গার বিভিন্নস্থানে মাদকদ্রব্যসহ আটক ১৩ জন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি পৃথক অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্যসহ ১৩ জনকে আটক করেছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ি ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ আফজাল হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ সদর উপজেলার দোস্ত বাজারে অভিযান চালান। বাজারের পাশে ব্রিজের ওপর তিন মোটরসাইকেল আরোহীকে পুলিশ থামানোর সিগনাল দিলে দুজন দুটি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। এ সময় গ্রেফতার করা হয় চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বসুদেবপুর গ্রামের সাদেক ম-লের ছেলে বাবুল ম-ল ওরফে বাবুকে (৩৫)। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৬০ বোতল ফেনসিডিল। গ্রেফতারকৃত বাবুল ওরফে বাবুর নামে বিভিন্ন থানায় ১৬টি মাদকের মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। পরে মাদকদ্রব্য আইনে মামলাসহ বাবুলকে সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। আজ তাকে আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে।
অপরদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর থানা পুলিশের এসআই মুহিতুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্সসহ সদর উপজেলার দ্বীননাথপুর গ্রামের মাঝেরপাড়ায় অভিযান চালান। এ সময় মাদরাসার সামনের রাস্তায় পৌঁছুলে এক ব্যক্তি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার হাতে থাকা একটি বাজারের ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় ৫০০ গ্রাম গাঁজা। পরে ফরজ আলীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়। আজ গ্রেফতারকৃত ফরজ আলীকে আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, ঝিনাইদহ র‌্যাব ও চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ি ফাঁড়ি পুলিশ মাদকবিরোধী পৃথক অভিযান চালিয়ে ফেনসিডিল ও মোটরসাইকেলসহ ২ অভিযুক্ত ২ মাদককারবারিকে আটক করেছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঝিনাইদাহ র‌্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম ও স্কোয়ার্ড কমান্ডার এএসপি বজলুর রশীদের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি চৌকস দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকবিরোধী অভিযান চালান দর্শনা পৌর এলাকার পরাণপুরে। পরাণপুর মাঠ থেকে র‌্যাব সদস্যরা আটক করে পরাণপুরের আব্দুল জলিলের ছেলে মেহেদী হাসানকে (২৩)। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আটককৃত মেহেদীর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩০১ বোতল ফেনসিডিল। এ ঘটনায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে বাদি হয়ে আটককৃত মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে দামুড়হুদা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে ১১ বোতল ফেনসিডিলসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো তারিনীপুর গ্রামের মৃত সমশের আলীর ছেলে জহর ম-ল (৩৮), সড়াবাড়িয়া গ্রামের আবু বক্করের ছেলে ইকরামুল হক (৩২) ও একই গ্রামের কাউছারের ছেলে আমিনুর ইসলাম (৩৩)। গত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত পৃথক পৃথক অভিযানে তাদেরকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।
দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের তারিনীপুর গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী জহর ম-ল (৩৮) তার নিজবাড়িতে ফেনসিডিল রেখেছে। এমন সংবাদে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিল্টন সরকার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তারিনীপুর জহর ম-লের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে ৬ বোতল মাদকদ্রব্য ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করে। আপরদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে সড়াবাড়িয়া পালপাড়া মুদিদোকানের সামনে থেকে কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই সাইফুল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ইকরামুল ও আমিনুরকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেহ তল্লাশি করে ৬ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে ।
দামুড়হুদা মডেল থানায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক পৃথক মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদেরকে আদালতে সৌপর্দ করা হয়েছে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা শহরতলির সলেমানপুর থেকে মাদক সেবন করতে এসে বিপত্তিতে পড়েছেন ৩ বন্ধু। মাদকসেবী ৩ বন্ধুকে জীবননগর শহরের আখ সেন্টারের সামনে হতে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের আজ শুক্রবার চুয়াডাঙ্গার সংশ্লিষ্ট আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে। থানা সূত্রে জানা গেছে, সংবাদ পেয়ে জীবননগর থানা পুলিশের একটি টিম জীবননগর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের আখ সেন্টারের সামনে মাদক সেবন করে মাতলামি করা কালে রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ৩ যুবককে গ্রেফতার করে। এসআই নাহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে এএসআই মিলন ও এএসআই ইমাদুল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে এ অভিযান পরিচালনা করে। গ্রেফতারকৃরা হচ্ছে- কোটচাঁদপুর উপজেলার সলেমানপুর গ্রামের হযরত আলীর ছেলে ফারুক হোসেন (৩০) খন্দকার বদরুল ইসলামের ছেলে লিমন হোসেন (৩০) ও নূর বক্সের ছেলে শাহাবুদ্দিন (৩৫)। তাদের বিরুদ্ধে ৩৪ ধারায় মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন। ওসি (তদন্ত) ফেরদৌস ওয়াহিদ সাংবাদিদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বুধবার রাতে মহেশপুর জলুলী সীমান্তে অবৈধভাবে ভারত যাওয়ার সময় ১ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে বিজিবি। ৫৮ বিজিবি সূত্রে প্রকাশ, বুধবার রাতে গোপন তথ্যের বিত্তিতে জুলুলী বিওপির টহল দল উপজেলার লেবুতলা গ্রামের নদীরপাড় হতে মো. মিন্টু হোসেন জোয়ারদার (২৮), পিতা মৃত আক্তার জোয়ারদার, গ্রাম ঘোড়ামারা, ঝিনাইদহকে বাংলাদেশি নগদ ১০ হাজার টাকা, দুবাই ভিসার কাগজপত্র, দুবাই গোল্ডকার্ড ১টি, দুবাই ইসলামী ব্যাংকের ভিসা কার্ড ১টি, ডিসকাউন্ট বাস কার্ড ১টি, ভারত-দুবাই বিমান টিকেট-১টি এবং ১টি আরব-আমিরাত আইডি কার্ডসহ সীমান্ত পার হওয়ার সময় আটক করে। আটক ব্যক্তি জানায়, সেখানে দালালের সহায়তায় নাম পরিবর্তন করে স্বপন ডালী ওরফে প্রফুল্ল ডালী নামে পাসপোর্ট গ্রহণ করে ভারতের নাগরিক হিসেবে ভারত হতে দুবাই চাকরির করার জন্য গমন করেছে। আটকের কয়েকদিন পূর্বে সে ছুটিতে দুবাই হতে ভারত আসে এবং অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। পরবর্তীতে অবৈধভাবে পুনরায় ভারতে গমনকালে বিজিবি কর্তৃক আটক হয়। এ বিষয়ে মহেশপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে।