তারেক ও খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি কি নির্বাচনে যাবে : না গেলে কী হবে?

শহর বন্দর থেকে গ্রাম-গঞ্জে এখন প্রধান আলোচ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ঘুরে ফিরে একই প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। নির্বাচনের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে তা নিয়ে শহর থেকে গ্রামবাংলায় ততোই জমে উঠছে আলোচনা। বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপিসহ ২০ দল থাকছে তো? না থাকলে রাজনীতির মেরুকরণ কী হবে? এসব প্রশ্নই প্রাধান্য পাচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলা সদর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়ে সর্বত্রই।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের সাত-আট মাস বাকি থাকলেও এসব প্রশ্নের ফাঁকে-ফাঁকে আরো কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিভিন্ন পরিসরের আলোচনায়। যেখানে ‘বিএনপিবিহীন আরেকটা নির্বাচন কী বর্তমানের ক্ষমতাসীনেরা হজম করতে পারবে? ভোটে না এসে আন্দোলন করার মতো সাংগঠনিক শক্তি কী বিএনপিসহ তাদের মিত্রদের রয়েছে? বিএনপি চেয়াপরপারসন বেগম খালেদা জিয়া কী ভোটের আগে মুক্তি পাচ্ছেন? তিনি মুক্তি পেলে পরিবেশ-পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে? তার মুক্তি না মিললে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ছাড়া বিএনপি কী নির্বাচনে যাবে?’-ইত্যাদি প্রশ্নও ঠাঁই পাচ্ছে সর্বত্রের আলোচনায়।

বিশ্লেষণ ও অনুমানধর্মী এরকম বহু প্রশ্ন স্বল্প-দীর্ঘ এসব আলোচনায় উঠে আসলেও এবং কখনো কখনো সেটি তক্কাতক্কি ও উত্তাপ ছড়ালেও উত্তর জানা নেই কারোরই। আলোচনায় যারা মেতে উঠছেন তাদের কেউ কেউ নিজস্ব মত-পথের নিরিখে সম্ভাব্য বিভিন্ন সমাধান হাজির করছেন। তবে সেটি আবার মানছেন না ভিন্নমতের আলোচকরা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কিংবা দুটি দল-মিত্রপন্থি; মোটা দাগে এই দুই ঘরানায় বিভক্তদের মাঝামাঝি যারা অবস্থান করেন তাদের কেউ কেউ অতীতের ইতিহাসের আলোকে নানা তত্ত্ব দিচ্ছেন। আবার ক্ষমতাসীনদের সমর্থকরা এসব তত্ত্ব নাকচ করে বলছেন- বিএনপি আসুক বা না আসুক নির্বাচন যথাসময়েই হবে, নির্বাচনের বিকল্প নেই। এই ঘরানার লোকজনদের বেশিরভাগকেই আবার বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলতে শোনা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতাই থাকবে। আবার বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা এই ধরনের মত নাকচ করে বলছেন, এবার আর পাঁচ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। বিএনপি এবারও ভোট বর্জন করলে ‘অন্যকিছু’ ঘটতে পারে বলেও এই ঘরানার লোকেরা শঙ্কার কথা শোনচ্ছেন।

তবে উত্তাপ-উত্তেজনা ছড়ানো এসব আলোচনার সমাপ্তি ঘটে অঙ্কের ফলাফল ছাড়াই। বিভিন্ন স্তর পর্যন্ত লেখাপড়া জানা এবং রাজনীতি সম্পর্কে একুট বেশি সচেতনদের যারা এসব আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন তারাও বিভিন্ন সূত্র প্রয়োগ করে অংকের সমাধান বের করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দিনের শেষে আলোচনা যেখান থেকে শুরু আবার সেখানেই ফিরে যাচ্ছে। অর্থাৎ বহুমাত্রিক আলোচনা আর অগণিত প্রশ্ন শেষ অবদি অমীমাংসিতই থেকে যাচ্ছে। তবে যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো, বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদে গত প্রায় সাড়ে নয় বছরে দেশজুড়ে উন্নয়নযজ্ঞের কথাও উঠে আসছে প্রায় দলমত ভেদে। যদিও আওয়ামী লীগ বা সরকার বিরোধীরা উন্নয়নের কথা মৃদুকণ্ঠে বলার পাশাপাশি উচ্চকণ্ঠে তুলছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা এবং গ্রামে-গঞ্জে সাধারণ মানুষ ও প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে সরকারি দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের দুর্ব্যবহারের কথা।

শহরকেন্দ্রিক চিন্তক মহলের আলোচনা-আড্ডায় অবশ্য কিছু কিছু ইঙ্গিতবহ কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। তাদের আলোচনা-মন্তব্যে যে বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে সেটি হলো- নির্বাচন হবে, এটা প্রায় নিশ্চিত। বিএনপি-জামায়াত ঘরানার নয়, তবে সরকারকে পছন্দ করেন না- এমন কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, এবার ভোট ভালো হবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই, এ বক্তব্যের সপক্ষে নানা যুক্তি-ব্যাখ্যাও তুলে ধরছেন তারা। সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ওয়াকিবহাল এমন চিন্তকরা তাদের আলোচনায় ভূ-রাজনীতিসহ বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়সহ পছন্দ-অপছন্দের নানাদিকও তুলে আনছেন। কেউ কেউ আবার ইতিহাসের পাতা ও নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কিছু সম্ভাব্যতার কথাও বলছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত আলোচনা থামছে একটি বাক্যে এসে; তা হলো- আসলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারও পক্ষে সুনির্দিষ্ট করে এসব প্রশ্নের জবাব জানা বা বলা অনেকটাই অসম্ভব। রাজধানীতে সম্প্রতি এরকম একটি ব্যক্তিগত আড্ডায় একজন বিশিষ্টজন বললেন, ‘আসলে আমরা কেউই সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানি না। সবাই যেটা বলছি সেটা হয় নিজেদের মতাদর্শের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বলছি, নয়তো অনুমান বা ধারণা করে বলছি।’ এসময় কিছুটা রসিকতা করে একজন বললেন, ‘কেউ কেউ হয়তো নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে উপস্থাপন করার উদ্দেশ্যে তথ্যের মতো করে কিছু বলার চেষ্টা করেন, যেটির ওপর আস্থা আনার মতো কোনো উপকরণ নেই।’

শহর থেকে অজপাড়া গ্রামের এরকম বহু মত-পথের মানুষের আলোচনায় কিংবা আড্ডায় রাজনীতি ও নির্বাচন মুখ্য হয়ে উঠলেও তরুণ প্রজন্মের আলোচনায় পরিলক্ষিত হচ্ছে ভিন্নতা। তাদের আলোচনার কেন্দ্রে থাকছে তথ্য-প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্যারিয়ার ভাবনা ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হওয়ার নানা উপায়ভিত্তিক গল্প। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, রাজধানী থেকে মফস্বল পর্যন্ত সর্বত্রই তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ এখন ঠিকাদারি থেকে শুরু করে নানা বৈধ উপার্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কারণে রাজনীতি ও নির্বাচন ভাবনা সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ এই তরুণ প্রজন্মের আলোচনায় তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না।