দেশবাসীর দৃষ্টি এখন গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিকে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৫ মে এ দুই সিটি কর্পোরেশনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। অতীতের বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন, বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের স্মৃতি নিয়ে মানুষ প্রত্যাশা করছে– এ দুটি নির্বাচনও সুষ্ঠু, সুন্দর, নির্বিঘ্ন ও পরিচ্ছন্ন হবে। তবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে ওই এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠিত হওয়ার পর এটি দ্বিতীয় নির্বাচন। ৩৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত এ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় ২৫ লাখ মানুষের বসবাস, যাদের অন্তত ৫০ শতাংশ শ্রমিক এবং এদের বড় অংশই ভাসমান। আসন্ন নির্বাচনে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বার্থ হাসিলে এসব শ্রমিককে ব্যবহার করলে অবাক হওয়ার থাকবে না। এছাড়া এ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি সরকারি কলেজ ও ২০টির বেশি বেসরকারি কলেজসহ দেড় শতাধিক মাদরাসা ও এতিমখানা রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানরত বহিরাগতরাও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য হুমকি বটে। সামনে অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। স্থানীয় পর্যায়ের কোনো নির্বাচন নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে, তাহলে এ কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক এবং এর ফল শুভ হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নিঃসন্দেহে ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ এবং এ নির্বাচনে জয়লাভের জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠবে বলেই মনে হয়। এ পরিস্থিতিতে বেআইনি অস্ত্র, কালো টাকা, পেশিশক্তির ব্যবহার ইত্যাদিসহ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শক্তহাতে মোকাবেলা করতে পারলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আশা করি কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। যে কোনো পর্যায়েরই হোক না কেন– প্রতিটি নির্বাচনকে স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন, বিশেষ করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তৎপরতা বৃদ্ধিসহ সরকারি ও বেসরকারি ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিম গঠন, প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নির্বাচন মনিটরিং টিম গঠন, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে দেশবাসীকে সুন্দর, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও পরিচ্ছন্ন নির্বাচন উপহার দেয়ার লক্ষ্যে কমিশন শতভাগ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবো।