হরিণাকু-ুতে চলমান এইচএসসি পরীক্ষা উপেক্ষা করে মেলার নামে চলছে জুয়া

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: চলমান এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যেও ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু উপজেলার ভবানীপুর বাজারে বৈশাখী মেলায় চলছে যাত্রা ও রমরমা জুয়ার আসর। এগুলো চলছে প্রশাসনের সামনেই। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চশব্দ হওয়ায় উপজেলা ও আশপাশ এলাকার এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিঘœ হচ্ছে লেখাপড়া। অপরদিকে নষ্ট হচ্ছে যুবসমাজ।
জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ভবানীপুর বাজারের বৈশাখী মেলায় চলছে উন্মুক্ত স্থানে জুয়া ও র‌্যাফেল ড্র। সকালে থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চশব্দে উপজেলা ও আশপাশ এলাকায় মাইকিং করে মেলার প্রচার করা হচ্ছে। উঠতি বয়সের যুবকেরা ভোর রাত পর্যন্ত ভিড় জমাচ্ছে যাত্রা প্যান্ডেল ও জুয়ার আসরে। জুয়ার নাম পাল্টিয়ে রাখা হয়েছে বউরানী খেলা। এরই পাশাপাশি চলছে মানুষ ঠকানো দৈনিক বিকাশ র‌্যাফেল ড্র নামের প্রকাশ্য জুয়া। এ ঘটনায় এলাকার অভিভাবক মহলসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। যাত্রা প্যান্ডেলের অপরদিকে পানবরজে বসানো হয়েছে র‌্যাফেল ড্র ও জমজমাট জুয়ার আসর। আয়োজকরা এতোই বেপরোয়া যে নামাজের সময় পর্যন্ত মাইক বন্ধ করছে না। লটারির নামে গ্রামগঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে র‌্যাফেল ড্র’র প্রচার মাইক। এনিয়ে মানুষ ক্রমশ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। মেলা হচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। কিন্তু মেলার অনুমতি নিয়ে মুলত জুয়া খেলাকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এলাকার যুবসমাজ র‌্যাফেল ড্র’র ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে। সেখানে বসানো হয়েছে দুটি বৌরানী নামক জোয়ার বোর্ড। যেখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়া খেলা হয়। আর এই জুয়ার আসরে ভিড় করছে উঠতি বয়সের স্কুল-কলেজগামী তরুণেরা।
আয়োজক কমিটির সদস্য বীর বসির আহমেদ জানান, বিচিত্রানুষ্ঠানের কথা না বললে মেলার প্রশাসনিক অনুমতি মেলেনা। মেলার অনুমোদন করতে ডিসি অফিস, এসপি অফিস, ইউএনও অফিস ও থানায় অনেক টাকা লাগে। এজন্য জুয়া ও র‌্যাফেল ড্র না চালালে পোষায় না। প্রতি রাতে প্রশাসনিক খরচ অনেক টাকা। তাই দুইটি বউরানী জুয়ার বোর্ড বাবদ প্রতি রাতে ৬০ হাজার, র‌্যাফেল ড্র বাবদ ৬০ হাজার ও যাত্রা বাবদ ৪০ হাজার সর্বমোট ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে মেলার মাঠ বহিরাগত এক পার্টির কাছে বিক্রয় করা হয়ছে। প্রতিদিন প্রশাসনের অনেক টাকার বিনিময়ে জুয়ার বোর্ড চালায়, সুতরাং পত্রিকায় রিপোর্ট করেও কোনো লাভ নেই। অনুমোদন থাকাকালীন কেউ এই মেলা ও জুয়ার বোর্ড বন্ধ করতে পারবে না। এ বিষয়ে এলাকাবাসী ভবানীপুর বাজারে মেলার নামে চলা জুয়া ও র‌্যাফেল ড্র বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
হরিণাকু-ু থানার অফিসার ইনচার্জকে এম শওকত হোসেন মুঠোফোনে জানান, মেলায় জুয়া চললে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, জুয়ার বিষয়টি খুবই আপত্তিকর, র‌্যাফেল ড্র’র কথা শুনেছি। আপনারও খবর নেন। আমিও নিচ্ছি। তারপর কি ব্যবস্থা নেয়া যায় দেখছি। বিষয়টি নিয়ে র‌্যাব-৬’র অধিনায়ক খোদাদাদ জানান, আসলে মেলার অনুমতি দেন জেলা প্রশাসক। তারপরও আমরা অনুসন্ধান করে দেখছি।
বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র আশরাফুল আলম অভিযোগ খন্ডন করে বলেন, প্রতি বছর বৈশাখী মেলা হয়। এবারও হচ্ছে। আমি আয়োজকদের কঠোরভাবে বলেছি কোনো ধরনের জুয়া খেলা হবে না। জুয়া চালারো হলে তিনি নিজেই মেলা ভেঙে দেবেন বলে জানান। আগে হয়তো জুয়া চললেও এখন আর চলছে না। তবে প্যানেল মেয়রের এই বক্তব্য নেয়ার পর রাতে সাংবাদিকদের একটি বিশেষ টিম গোপনে জুয়া খেলার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন। কালীগঞ্জ থানার ওসির বক্তব্য নিতে তার মুঠোফোনে কল করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে ফোন দিলে তিনিও ফোন ধরেননি।