স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি প্রাথমিক নিয়োগ বিধিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। নিয়োগ প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়সসহ ৫ ধরনের পরিবর্তনে নতুন নিয়োগ বিধিমালায় খসড়া প্রণয়ন করে ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। এখন চলছে যাচাই-বাছাই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগের বিধিমালা অনুযায়ী পুরম্নষ ও নারীর জন্য পৃথক পৃথক শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও নতুন বিধিমালাতে নারী-পুরুষ শিক্ষাগত যোগ্যতা একই করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগের বিধিমালাতে সহকারী শিক্ষক পদে পুরুষের জন্য স্নাতক আর নারীদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পাসের শর্ত ছিলো।
কিন্তু নতুন বিধিমালায় সহকারী শিক্ষক পদে পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত নারীদের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা বহাল থাকছে। আগের বিধিমালায় প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এতদিন স্নাতক পাস হলেই আবেদন করা যেত। নতুন প্রস্তাবনায় শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর করা হয়েছে।
পরিবর্তন আসছে বয়সের ক্ষেত্রেও। আগে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ছিলো ২৫ থেকে ৩৫ বছর। তবে এখন এই পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) নীতিমালার সঙ্গে সংগতি রেখে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর। তবে আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হওয়ার বিধানও থাকছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য হবে। বাকি ৩৫ শতাংশ পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হবে। তবে এই পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির পুরো দায়িত্বই থাকবে পিএসসির।
এছাড়া বর্তমানে নতুন বিধিমালায় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগেও জোর দেয়া হয়েছে। আগে যেকোনো বিষয়ে পাস করা প্রার্থীর সমান সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এতে মানবিক বিভাগ থেকে আসা শিক্ষকরা গণিত ও বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলো সহজে আত্মস্থ করতে পারেন না। এ কারণে নতুন বিধিমালায় সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট পদের শতকরা ২০ ভাগ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্য থেকে নেয়ার প্রস্ত্মাব করা হয়েছে। এছাড়া ক্লাস্টার বা উপজেলাভিত্তিক আর্ট ও সংগীত শিক্ষক রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
নতুন বিধিমালা কার্যকর হলে শিক্ষক নিয়োগ আগের মতোই উপজেলা বা থানাভিত্তিক হবে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত সহকারী শিক্ষক নির্বাচন কমিটির সুপারিশ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে সহকারী শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা না হলে কাউকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এমন ব্যক্তিকে বিবাহ করেছেন অথবা বিবাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন, এমন কাউকেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না।
নতুন বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, ১৩তম থেকে ১৬তম বেতন গ্রেডের কোনো পদে থাকা শিক্ষককে দশম থেকে দ্বাদশ বেতন গ্রেডের কোনো পদে পদোন্নতির সুপারিশ করা যাবে। আর দশম থেকে দ্বাদশ গ্রেডে থাকা শিক্ষক নবম বা তদূর্ধ্ব গ্রেডের কোনো পদে পদোন্নতির সুপারিশ পেতে পারেন। তবে উভয় ক্ষেত্রেই পিএসসির সুপারিশ প্রয়োজন হবে। ২০১৩ সালের নিয়োগ বিধিমালায় এসব শর্ত নেই। বর্তমানে কোনো ব্যক্তির শিক্ষক পদে যোগ দেয়ার তিন বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ বা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও নতুন বিধিতে তা থাকছে না।
এবিষয় জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. রমজান আলী বলেন, বর্তমান নতুন বিধিমালা মন্ত্রণালয় রয়েছে। এটা নিয়ে অধিদপ্তরে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। করা হয়েছে একাধিক মিটিং এই বিধিমালা পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত এটা প্রস্তাবই বলতে হবে। মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করলে তা জনপ্রশাসনে যাবে, সচিব কমিটিতে যাবে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি নতুন বিধিমালা অনুমোদন দেয়া হবে।
প্রস্তাবিত বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে এবং সরকার ঘোষিত ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগে এমন পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
বিধিমালা অনুযায়ী, ২০১৩ সালে প্রণীত বিধিমালায় প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি শতকরা ৩৫ ভাগ এবং সহকারী শিক্ষক থেকে শতকরা ৬৫ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করার বিধান ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ৯ মার্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। ফলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়টি পিএসসির বিবেচনাধীন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের এটিও অপরিহার্য কারণ।