মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা দেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। শহরাঞ্চলে তো বটেই, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আজ এই মারণনেশার ছড়াছড়ি। ইয়াবার অবৈধ ব্যবসায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় নানা শক্তিশালী চক্র। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার শক্তি সাধারণ মানুষের নেই। প্রতিবাদ করতে গিয়ে এরই মধ্যে অনেককে জীবনও দিতে হয়েছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও জড়িয়ে পড়ছেন এর সাথে। কিছু সদস্য এরই মধ্যে ধরাও পড়েছেন। এরপরও অব্যাহত গতিতে বাড়ছে মাদক ও ইয়াবার ব্যবসা। এভাবে চলতে থাকলে এ দেশের যুবসমাজ পুরোপুরি ধ্বংস হতে খুব বেশি সময় লাগবে না তার বর্তমান পরিস্থিতি সেরকমই বলে। এরপরও এর রাশ টানা যাচ্ছে না কেন? আরও কিছু বাস্তব কারণের সাথে অনেকে সদিচ্ছার অভাবকেই দায়ী করে বেশি।
গণমাধ্যমেও এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় মাদকের বিস্তৃতি। এই বিস্তৃতির পেছনে যে কারণগুলো দায়ী সেগুলোও বারবার আলোচিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বহু প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি এ ব্যবসার পেছনে রয়েছেন। পুলিশ বড়জোর কয়েকজন বাহককে বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে ধরে, সেই রাঘব বোয়ালদের কাছে পৌঁছুনো সম্ভব হয় না। ফলে দুজন বাহক গেলে নতুন দুজন বাহককে সেখানে কাজে লাগানো হয়। ব্যবসা অব্যাহত গতিতেই চলে। আইনেও কিছু দুর্বলতা রয়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নেশা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইয়াবা, অথচ ১৯৯০ সালের আইনে ইয়াবার নামই নেই। ফলে ইয়াবা পাচার, বেচাকেনা এবং ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। বিচারের দীর্ঘসূত্রতাও এ ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলতে থাকে। আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আসে। একসময় সাক্ষী-প্রমাণের অভাবে মামলা বাতিলও হয়ে যায়। সম্প্রতি সচিবসভায় মাদক নিয়ন্ত্রণের সমস্যাগুলো গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়েছে এবং সেখানে এমন কতিপয় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে মাদক নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়া সংক্ষিপ্ত করে আনার উদ্যোগ নেয়া, বিধি-বিধানগত জটিলতা না থাকলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সিপাহীদের আগ্নেয়াস্ত্র দেয়া, পুলিশ স্টাফ কলেজ ও লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্যোগে অধিদফতরের কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া এবং জেলা প্রশাসন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও তথ্য অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে মাদকবিরোধী প্রচার কার্যক্রম জোরদার করা।
শুধু সচিবসভা নয়, যুবসমাজের ধ্বংস ঠেকাতে যার যেখানে যতোটুকু দায়িত্ব আছে, তিনি বা তারা সেই দায়িত্ব পালনে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবেন। যেকোনো মূল্যেই হোক, মাদকের এই বিস্তার রোধ করতেই হবে।