চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্টের ভুল অপারেশনে সুস্থ স্কুলছাত্রী রোমানা চিরতরে পঙ্গু

?

হাসপাতালের পক্ষে দেয়া হয়েছে হুমকি : দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি
জীবননগর ব্যুরো: জন্মের পর হতে রোমানার ডান পায়ের পাতাতে সামান্য সমস্যা ছিলো। অনেকটা ডিঙি মেরে তাকে হাঁটতে হতো। এতে চলাচলে তার কোনো সমস্যা ছিলো না। সে ছিলো সুস্থ সবল একজন শিশু স্কুলছাত্রী। সেই রোমানার ডিঙি মারা পায়ের পাতা ঠিক করে দিতে গিয়ে ইম্প্যাক্টের একটি ভুল অপারেশন তার জীবনে চিরতরে পঙ্গুত্ব ডেকে এনেছে। নবম শ্রেণির মেধাবী এ ছাত্রীর দায়িত্ব কে নেবে? এ প্রশ্ন রোমানার দরিদ্র পরিবারের। রোমানা জীবননগর উপজেলার কয়া গ্রামের শামসুল হকের একমাত্র মেয়ে।
রোমানা ও তার পরিবার জানায়, ডান পায়ের পাতাতে সামান্য জটিলতা নিয়ে ২০০০ সালে জন্মগ্রহণ করে রোমানা। তার বাম পা ছিলো স্বাভাবিক। ডান পায়ের পাতায় ভর দিয়ে অনেকটা ডিঙি মেরে সে চলাচল করতো। এতে তার কোনো সমস্যা ছিলো না। ২০১২ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াকালে তার পায়ের ওপর নজর পড়ে চুয়াডাঙ্গা ইম্প্যাক্টের মাঠকর্মী হাসানের। সে রোমানার দরিদ্র পিতার সাথে যোগাযোগ করেন। বলেন অনেক কম খরচে রোমানার ডান পায়ের পাতা অপারেশনের মাধ্যমে ঠিক করা যাবে। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অপারেশনে রাজি হন পিতা শামসুল। ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি তার পায়ে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর তার পরিবার দেখতে পায় সমস্যা না থাকলেও রোমানার বাম পায়েও অপারেশন করা হয়েছে। বাম পায়ে অপারেশন কেনো? জিজ্ঞাসা করা হলে জানানো হয়, এটি মেডিকেলের ব্যাপার, আপনারা বুঝবেন না। অপারেশনের পর রোমানা সুস্থ হওয়ার বদলে অসুস্থ হতে থাকে। সে দাঁড়াতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এসময় ইম্প্যাক্ট হতে তার জন্য এক জোড়া জুতা সরবরাহ করা হয়। এ জুতা পরে সে কেবল দাঁড়াতে পারে। হেঁটে চলাচল করতে পারে না। পরবর্তীতে একাধিকবার ইম্প্যাক্টে রোমানাকে নেয়া হলে একের পর এক ব্যবস্থাপত্র দেয়া হলেও রোমানা আর দাঁড়াতে পারেনি। এ অবস্থায় তার পরিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে রোমানাকে ভর্তি করে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর চিকিৎসকরা জানান, রোমানার দু পায়ে ভুল অপারেশন করা হয়েছে। ফলে স্বাভাবিক জীবনে সে আর ফিরতে পারবে না। খুলনা থেকে ফেরার পর আবার রোমানাকে ইম্প্যাক্টে নেয়া হয়। জানানো হয় ভুল অপারেশনের বিস্তারিত। ইম্প্যাক্টের কর্তব্যরত কর্মকর্তা জানান, বুঝতে পেরেছি। বিদেশি চিকিৎসক আসুক, ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই বলে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাদেরকে একের পর এক সময় দিয়ে ঘোরানো হয়। ৪ বছর ঘোরার পর ইম্প্যাক্ট কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে প্রতারণা করছে বুঝতে পারে রোমানার পরিবার। দীর্ঘদিন ঘোরার একপর্যায়ে রোমানার পরিবার উত্তেজিত হয়ে পড়লে তাদেরকে ইম্প্যাক্টের পক্ষ হতে হুমকি প্রদর্শন করা হয়। বলা হয় ইম্প্যাক্ট অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। তোমরা বাড়াবাড়ি করে কিছুই করতে পারবে না। বরং উল্টো তোমাদেরই ক্ষতি হয়ে যাবে। ক্ষতির কথা চিন্তা করে রোমানার পরিবার আর তাকে ইম্প্যাক্টে নিয়ে যায়নি। কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি। রোমানাকে আর কোথাও দেখাতে পারেনি তার দরিদ্র পরিবার।
রোমানা বর্তমানে জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। তার শ্রেণি রোল নং-১। প্রতিদিন হুইল চেয়ারে করে তাকে স্কুলে নিয়ে যাতায়াত করেন তার পরিবার। আলাপকালে রোমানা জানায়, আমি সুস্থ একজন শিশু ছিলাম। স্কুলে যেতাম ও বন্ধুদের সাথে খেলা করে বেড়াতাম। এ অবস্থায় অনেকটা জোর করে আমাকে ইম্প্যাক্টে নিয়ে এক পায়ের স্থলে দু পায়ের গোঁড়ালীতে অপারেশন করে আমাকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আমাদের সাথে দুর্ব্যবহারও করা হয়েছে। আমার এ পঙ্গুত্বের দায়ভার কে নেবে? সেই সাথে যে চিকিৎসক অপারেশন করে আমাকে চিরতরে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে আমি ওই চিকিৎসকসহ ইম্প্যাক্টের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি। দাবি করছি ন্যায্য ক্ষতিপূরণের।