দেশের অর্থনীতি আরও বেগবান করাই সরকারের মূল লক্ষ্য

দর্শনায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর বাস্তবায়নে পরিদর্শন করলেন চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী

দর্শনা অফিস: দর্শনাবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম দর্শনাকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে উন্নিত করণ। এ লক্ষ্যে কাজ করছে দর্শনা স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ। ইতোমধ্যে গত বছরের ১২ জুলাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অভ্যান্তরীন বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান দর্শনা পরিদর্শন করেছেন। এবার দর্শনা পরিদর্শন করলেন স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী দর্শনা জয়নগর সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন ও মতবিনিময় করেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার সুনিপুন নির্দেশনায় দেশের সবকটি জেলা সম্ভাবনাময়ী এলাকা খুঁজে বের করে সেখানে সম্ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সে জেলাগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি কীভাবে বেগবান করা যায়, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দফায় দফায় বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের সম্ভাবনাময়ী স্থানগুলো নির্ধারণ করে নতুনভাবে অর্থনৈতিক বিচার-বিশ্লেষনের মাধ্যমে নতুন কৌশলপত্র প্রনয়ণ করা হচ্ছে। জেনে খুশি হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহ নির্দেশনায় আমরা প্রথম যে স্থানটি বেছে নিয়েছি, তা হচ্ছে আপনাদের স্বপ্নের শহর দর্শনা। দর্শনার প্রতি আমার বরাবরই ইতিবাচক ধারণা ছিলো, যা বাস্তবে রূপ নিলো আপনাদের শহরে পা রেখে। আমাকে অভিভূত করেছে এ শহরের খেটে খাওয়া মানুষগুলো। আমি স্বীকার করছি আপনারা নিজেদের অধিকার নিতে জানেন। তবে অধিকার পাওয়ার মতোই শহর দর্শনা। এ শহরে স্থলবন্দর স্থাপনের সবধরণের ব্যবস্থা রয়েছে। যে কারণে আপনাদের প্রাণের দাবীর প্রতি একাতœা ঘোষণা করছি। দর্শনায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হবেই হবে। এ বন্দর স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রতিবেদনে প্রথমেই থাকবে দর্শনা স্থলবন্দর স্থাপনের কথা। আমি সফর শেষে কালবিলম্ব না করেই প্রতিবেদন দাখিল করবো। সেই সাথে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল আরশাদুজ্জামান খাঁন, চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ডের পরিচালক লে. কর্ণেল ইমাম হাসান, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মাহাফুজুর রহমান মনজু, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসান, দর্শনা কাস্টমস সুপারিনটেনডেন্ট নুর আরেফিন, দর্শনা স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক সাংবাদিক রেজাউল করিম লিটন, দর্শনা সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ ও বন্দর কমিটির উপদেষ্টা মোশাররফ হোসেন, দর্শনা রেল বাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাবির হোসেন মিকা, দর্শনা পুরাতন বাজার কমিটির সভাপতি আশরাফ আলম বাবু, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সোহেল, বাসস্ট্যান্ড বাজার কমিটির সভাপতি হায়দার আলী, সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহম্মেদ সান্টু, দর্শনা সিঅ্যান্ডএফ অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি আতিয়ার রহমান হাবু, দর্শনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোতালেব হোসেন, দর্শনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল হক পিপুল, সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল মেহমুদ, সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান ধীরু ও আওয়াল হোসেন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, দর্শনা ভৌগলিকভাবে সীমানা খুব দীর্ঘ না হলেও ইতিহাস, ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ভূখন্ড গঠিত হবার পূর্ব থেকেই অত্যান্ত সমৃদ্ধ একটি শহর। ১৯৩৮ সালে এশিয়ার মহাদেশের ২য় বৃহত্তর ও দেশের সর্ববৃহত চিনিকল কেরু অ্যান্ড কোম্পানি দর্শনায় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভীত আরও মজবুত হয়। দর্শনায় কাস্টমস স্থাপিত হয় ১৯৫৮ সালে। পরপরই ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথম বাংলাদেশের ভূখন্ডে দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার রেলপথ করা হয় নির্মাণ। সেই থেকে ‘দর্শনা জংশন’ দেশের বুকে আলাদা একটা মহিমা নিয়ে পরিচিতি লাভ করতে থাকে দর্শনা। দর্শনায় আন্তর্জাতিক রেলপথ যার মাধ্যমে ১৯৬৫ সালের পূর্বে ভারতের সাথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয় দর্শনা স্টেশন থেকে। বর্তমানে যা দর্শনা আন্তর্জাতিক স্টেশন নামে পরিচিত। দর্শনার সাংস্কৃতিক পরিচয় আজও দেশব্যাপী সমাদৃত। দর্শনার এক সময়ের প্রশাসনিক পরিচয় ছিলো ইউনিয়ন যা ১৯৯১ সালে পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে দর্শনা পৌরসভা “বি ক্যাটাগরি” মর্যাদাপ্রাপ্ত। রাজনৈতিকভাবেও দর্শনার অবস্থান বেশ মজবুত। দর্শনা পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর স্থাপনের সব ধরণের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া দর্শনাবাসীর আরও একটি দাবি দর্শনাকে উপজেলায় উন্নিত করণ।