চুয়াডাঙ্গায় ছাত্রদল ও যুবদলের মিছিলে পুলিশি লাঠিচার্জসহ আটক : বিক্ষিপ্তভাবে ট্রাক ও অটোরিকশা ভাঙচুর : ঝিনাইদহে পুলিশ সদস্যসহ আহত ৭
স্টাফ রিপোর্টার: অবরোধের দ্বিতীয় দিনে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশি লাঠিচার্জের পর ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি ট্রাকসহ কমপক্ষে ৮টি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। সদর থানার সামনেও অটো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এসব ঘটনা ঘটে। পুলিশ ৭ জনকে আটক করলেও ৪ জনকে আদালতে সোপর্দ করেছে। বাকিদের ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া করা হয়। এর পরপরই জেলা যুবদলের একাংশ বিক্ষোভ মিছিল বের করে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে উগ্র হয়ে ওঠে। জীবননগরে উথলীর অদূরে সন্ধ্যার পর পুলিশি পিকআপেও ইটনিক্ষেপ করে কাঁচ ভেঙেছে আন্দোলনকারীরা। মেহেরপুরের গাংনীতে অবরোধকারীদের সাথে পুলিশের
তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। অসংখ্য গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের বঙ্গবন্ধু স্মৃতিক্লাবে ব্যাপক ভাঙচুরসহ অংগ্নিসংযোগ করা হয়। একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণে তটস্থ হয়ে ওঠে গাংনী। পুলিশ কমপক্ষে ৬ রাউন্ড গুলি ও ৪টি টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। গতকাল সাড়ে ৮টার দিকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ চলে প্রায় দু ঘণ্টা ধরে। গাংনী নির্বাচন অফিসও ভাঙচুর করা হয়। চলে দীর্ঘসময় ধরে। এ সময়ে গাংনী উপজেলা শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ৪ জনকে আটক করে। এর মধ্যে দুজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয়। আদালত দুজনকেই ১ মাস করে কারাদণ্ডাদেশ দেন। ঝিনাইদহে পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি যানবহন। সংঘর্ষে পুলিশসদস্যসহ ৭ জন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
অবরোধ চলাকালে গতকাল রোববার নোয়াখালী, সিলেট, বেলকুচিসহ আরো কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৩ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণিপড়ুয়া এক স্কুলছাত্র রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা, সাভারসহ কয়েকটি স্থানে যাত্রীবাহী যানবাহনে আগুন দিলে পাঁচ যাত্রী আহত ও এক টেম্পুচালক অগ্নিদগ্ধ হন। এছাড়া চট্টগ্রাম ও সোনারগাঁওয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে এবং উল্লাপাড়ায় থানার ভেতরে ককটেল নিক্ষেপ করে অবরোধ সমর্থকরা। ৭২ ঘণ্টার অবরোধকর্মসূচির আজ শেষ দিন। এদিনে জামায়াত সারাদেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদল জেলা বিএনপির শেখপাড়াস্থ কার্যালয় থেকে মিছিল বের করে। অবরোধ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের পোস্টঅফিসের সামনে পৌঁছুলে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ শুরু করে। ছাত্রদলের মিছিলটি ছাত্রভঙ্গ হলেও তারা বিক্ষিপ্তভাবে শুরু করে ভাঙচুর। বিএনপি কার্যালয়ের অদূরে বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে, পোস্টঅফিসের সামনে দুটি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। নতুনবাজার রাস্তায় খাতুন স্টোরের সামনের হোটেল আলমেরাজের সামনে থেকে থাকা একটি মিনিট্রাকসহ দুটি ট্রাকে ইটনিক্ষেপ করে ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। থানার সামানেও একটি অটো ভাঙচুরের মুখে পড়ে। ১ নং পানির ট্যাঙ্কের নিকট একটি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। বিএনপি একাংশের কেদারগঞ্জস্থ কার্যালয়ের অদূরেও দুটি অটো রিকশা ভাঙচুর করা হয়। বিক্ষিপ্তভাবে ভাঙচুর শুরু হলে তটস্থ হয়ে ওঠে গোটা জেলা শহর। মিছিলে লাঠিচার্জের পরপরই ৭ জনকে আটক করে। আটককৃতদের থানায় নেয়া হয়। এরা হলো- চুয়াডাঙ্গা মসজিদপাড়ার মৃত জাফর আলীর ছেলে সাদ্দাম হোসনে (২৩), শান্তিপাড়ার হারুন অর রশিদের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক সোহেল (২২), বালিয়াকান্দির জালাল উদ্দীনের ছেলে হিরোক, দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার এম. জেনারেল ইসলামের ছেলে আকাশ (২০), ঢাকা মোহাম্মদপুর কাটাসুরের খলিলুর রহমানের ছেলে বজলুর রহমান (৩৫), ঢাকা গুলশানপাড়ার ফজলুর কাদেরের ছেলে রবিন (২৮) ও গুলশানপাড়ার বকুলের ছেলে সোহেব আলী (২০)। এদের মধ্যে সাদ্দাম, আবু বক্কর ও হিরোককে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পুলিশসূত্র এ তথ্য জানালেও বিএনপি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলেছে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৪ জনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরের গাংনীতে গতকাল রোববার সকালে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মী সমর্থকরা। এ সময় উপজেলা সার্ভার স্টেশন (নির্বাচন কার্যালয়), সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মহুরাদের বসার স্থান ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ক্লাব, দোয়েল ক্লাব ও কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ক্লাবের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। ভাঙচুরের সময় অন্তত ২০-২৫টি ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ৬ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি এবং ৪টি টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। গ্রেফতারের পাশাপাশি দুজনকে দণ্ড দিয়েছেন ভ্র্যম্যমাণ আদালত।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ১৮ দলীয় জোটের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সমর্থক গাংনী উপজেলা শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয়। জেলা বিএনপি সভাপতি মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন ও উপজেলা যুবদলের সভাপতি আক্তারুজ্জামান আখ সেন্টারের পাশে, উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু ও পৌর বিএনপির যুগ্মসম্পাদক মকবুল হোসেন মেঘলা শিশিরপাড়া মোড়ে এবং পৌর বিএনপির সভাপতি ইনসারুল ইন্সু, পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহীল মারুফ পলাশ ও জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দাল হক পূর্ব মালসাদহ মোড়ে অবস্থান নেন। তিনটি পয়েন্টেই বিএনপি-জামায়াতের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সমর্থক জড়ো হন। একই সাথে তারা বিক্ষোভ মিছিল ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে গাংনী শহরের দিকে রওনা দেন। শহরের কাছাকাছি এলে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা তাদের আটকে দেয়। এক পর্যায়ে কোনো বাধা মানেনি। নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে রাস্তা ছেড়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। জোটের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা হাসপাতাল বাজারে গিয়ে প্রথমে দোয়েল ক্লাব ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্মসম্পাদক মজিরুল ইসলামসহ তাদের নেতাকর্মীদের বসার স্থান বঙ্গবন্ধু স্মৃতিক্লাবে হামলা চালায়। ক্লাবের আসবাবপত্র, টেলিভিশন ও জিনিসপত্র ভাঙচুর করে আগুন দেয়। এ সময় সড়কের বিভিন্ন স্থানে ২০-২৫টি ককটেল বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধরা উপজেলা পরিষদের মধ্যে অবস্থিত সার্ভার স্টেশনে (নির্বাচন অফিস) হামলা চালায়। সেখানে কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করে। ইটপাটকেল নিক্ষেপে স্টেশনের জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। নির্বাচন অফিসের মধ্যেই ছিলেন পুলিশের কয়েকজন সদস্য। একই সময়ে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মহুরাদের বসার স্থান ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৬ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি এবং ৪টি টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীরা বাসস্ট্যান্ডের দিকে ফিরে আসার সময় হাসপাতাল বাজারের মতিনের চায়ের দোকান, আওয়ামী লীগ সমর্থক শাপলা মেশিনারীজের সামনে থাকা প্লাস্টিকের কয়েকটি ট্যাংক ও দুটি ট্রাকে ভাঙচুর করে। বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত যুবলীগ নেতা মজিরুল ইসলামের ভাই আব্দুল খালেকের বাসকাউন্টারে সামান্য ভাঙচুর চালায়। এ সময় বিএনপি নেতারা বাধা দিয়ে বিক্ষুব্ধদের ফিরিয়ে দেয়। এদিকে হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে।
১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা শহর ছেড়ে যাওয়ার পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পুনরায় শহরের মহড়া দেয়। উপজেলা পরিষদ এলাকা থেকে দুজনকে আটক করে। এরা হলেন বিএনপিকর্মী পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের জিয়াউর রহমান (৩২) ও শিশিরপাড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলামকে (৩৫)। পরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরো কয়েকজনকে আটক করা হয়। রাত ৯টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে বসানো হয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুল আলম সোনার ছেলে বিএনপি সমর্থক ফরহাদ আলী রুবেল (৩০) ও চাঁদপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফাকে (৩৮) এক মাসের করে কারাদণ্ড দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইদ মোমেন মজুমদারের ভ্রাম্যমাণ আদালত। মোবাইলকোর্ট আইন ২০০৯ এর ৮(১) ধারা অনুযায়ী দণ্ড দেয়া হয়েছে বলে ভ্রাম্যমাণ আদালতসূত্রে জানা গেছে। আদালতের নির্দেশে দণ্ডপ্রাপ্তদের মেহেরপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করার প্রস্তুতি চলছিলো বলে জানিয়ে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া অন্যদের আদালতে প্রেরণের পাশাপাশি ভাঙচুর ও বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুদুল আলম।
ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুরে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩ পুলিশসহ ৭ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৮ রাউন্ড টিয়ারসেল ও ২৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলি বর্ষণ করে।
পুলিশ ও প্রতক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শহরের আরাপপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমানের নেতৃত্বে অবরোধের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়ক অবরোধ করে নেতাকর্মীরা। এ সময় অবরোধকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়, একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। তারা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এতে ৩ পুলিশ সদস্যসহ ৭ জন আহত হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে জানান ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি কাজী জালাল উদ্দিন। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে ওসি জানান। শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে জেলা যুবদলরে যুগ্মআহ্বায়ক মীর ফজলে এলাহী শিমুল জানান, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়েছে।
ঝিনাইদহ অফিস আরও জানিয়েছে, জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক এমএ মজিদসহ নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে আজ সোমবার ঝিনাইদহে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ১৮ দল। গতকার রোববার দুপুর ১২টার দিকে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান বিএনপি-জামায়াতসহ ১৮ দলের পক্ষে এ হরতালের ঘোষণা দেন।
১৮ দলের পক্ষ থেকে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জেলার ৬ উপজেলায় ১৮ দলের নেতাকর্মীদের ওপর অব্যাহত হামলা-মামলা ও পুলিশি নির্যাতন চলছে। বিনা উসকানিতে তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও গুলি করছে। এসবের প্রতিবাদে ১৮ দলীয় জোট সোমবার সকাল-সন্ধ্যা জেলায় শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করবে। এদিকে হরতালের সমর্থনে সদর উপজেলার হাটগোপালপুর বাজারে হরতালের সমর্থনে মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। কালীগঞ্জে বিএনপি নেতা হামিদুল ইসলামের নেতৃত্বে মিছিল হয়েছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা।
ঝিনাইদহ অফিস আরও জানিয়েছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেনকে গতকাল রোববার দুপুরে পৌরভবন থেকে আটক করেছে পুলিশ। আটক আনোয়ার হোসেন কালীগঞ্জ শহরের বলিদাপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে ও পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রোববার দুপুরে কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন কালীগঞ্জ পৌরমেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজুর অফিস কক্ষে বসে ছিলেন। এ সময় সেখান থেকে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে আটক করে। কালীগঞ্জ থানার ওসি মনির উদ্দীন মোল্লা বলেন, গত ৩ ডিসেম্বর পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা ও বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া তার নামে গাড়িতে আগুন দেয়া ও বিস্ফোরক আইনে আরও একটি মামলা রয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আইনাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানির উদ্দেশেই যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ।
১৮ দলের দ্বিতীয় দিন অবরোধের সমর্থনে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করার সময় অর্তকিতভাবে পুলিশ হামলা চালায় বলে একপ্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। গতকাল রোববাবর সকাল ১১টায় বিএনপি নেতা-কর্মী যখন জেলা বিএনপি সহসভাপতি এম জেনারেল ইসলাম ও যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদুজ্জামান বুলার নেতৃত্বে পৌর বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন, সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক মালিক মজু, থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মন্টুসহ যুবদল-ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু করে ঠিক তখনই বিপুল সংখ্যক পুলিশ পোস্টঅফিসের সামনে বেপরোয়াভাবে লাঠিচার্জ করে। এতে ১০/১৫ জন আহত হয়। মিছিলের মধ্যে থেকে গ্রেফতার করা হয় জেলা ছাত্রদল নেতা মো. আবাবিল হোসেন সাদ্দাম, আবু বক্কর সিদ্দিকী, সোহেল ও যুবদল নেতা মো. হিরক। পরে এ গ্রেফতারের নিন্দা করে এবং গ্রেফতার হওয়া ছাত্র নেতাদের মুক্তি দাবিতে বিএনপি মিছিল করে।
এদিকে গতকাল সকাল ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফ-উর-জামান সিজারের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক জাহেদ মো. রাজিব খান। মিছিলটি চুয়াডাঙ্গা ফেরিঘাট রোড হয়ে চৌরাস্তা দিয়ে কোর্ট মোড় হয়ে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব পার হয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। ছাত্রদলের মিছিলটি হুসাইন প্রেসের সামনে এলে পুলিশ মিছিলটির পেছন দিক থেকে হামলা করে। পুলিশ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয় এরপর পুনরায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পোস্টঅফিসের সামনে এসে জড়ো হলে পুলিশ আকস্মীকভাবে বিএনপি ও ছাত্রদলের ওপর লাঠিচার্জ করলে পুনরায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে যায়। এ সময় উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা কয়েকটি যানবহন ভাঙচুর করে। ওই অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদল গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। এ ঘটনায় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা আহত হয়। সেসময় কলেজ ছাত্রদলের নেতা আবাবিল হোসেন সাদ্দামকে পুলিশ গ্রেফতার করে। জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পুলিশের উসকানিমূলক হামলা, গ্রেফতার ও মামলার তীব্র প্রতিবাদ জানায় একই সাথে ক্ষমতা লোভী সরকারের একগুয়েমী একদলীয় পাতানো নির্বাচনের প্রতিবাদে ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের ৭২ ঘণ্টা অবরোধ সফল করার জন্য এবং মহাজোট সরকারের ৫ (পাঁচ) বছরের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য জনগনকে সাথে নিয়ে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন করার জন্য আহ্বান করে।
গতকাল ১৮ দলের শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলাকালীন জেলা ছাত্রদলের নেতা আবাবিল হোসেন সাদ্দাম, আবু বক্কর সিদ্দিকী, সোহেল ও যুবদলের হিরককে গ্রেফতারের তীব্র নিদ্দা জানান জেলা যুবদলের আহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। বিবৃতিতে তিনি আটক নেতাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং মুক্তি দাবি করেন।
অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদল একাংশ অবরোধ সফল করার লক্ষ্যে গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বর থেকে বের হলে পোস্টঅফিসের সামনে পুলিশের বাধায় ফিরে কোর্টমোড়ে প্রদক্ষিণ করে পুনরায় শহীদ হাসান চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খালিদ মাহমুদ মিল্টন। সদস্য সচিব সাইফুর রশিদ ঝন্টুর উপস্থানায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপি একাংশের যুগ্মসম্পাদক মাহামুদুল হক পল্টু। বিশেষ অতিথি ছিলেন দফতর সম্পাদক আবু আলা সামসুজ্জামান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাজি আব্দুল মান্নান, ওলামাদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক শাহজান খান, স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্মআহ্বায়ক মিজান, মিনহাজ, তরুনদলের যুগ্মআহ্বায়ক সাইদুর, সদর থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাসুদ, যুগ্মআহ্বায়ক সাইদুর, মিলন, জয়নাল, পিন্টু, রফিকুল, মানিক, লিটন, লাল, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক হাজি রবিউল হক, পৌর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ, দামুড়হুদা থানা যুবদলের আহ্বায়ক বাচ্চু, আনিছ, আলমডাঙ্গা পৌর যুবদলের আহ্বায়ক ফরহাদ, দর্শনা পৌর যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক খেদু, সোহেল তরফদার, আসাদ, সাত্তার, আলমডাঙ্গা থানা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মীর উজ্জ্বল, ঠাণ্ডু, মিন্টু, সমসের, উজ্জ্বল, পৌর যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মনির, মিন্টু, চুয়াডাঙ্গা পৌর যুবদলের আজিজুল প্রমুখ।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, রোববার সকালে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে দিনদত্ত ব্রিজের নিকট কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল মতিন, বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম, জামায়াত নেতা আব্দুল জাব্বারের নেতৃত্বে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে ১৮ দলীয় নেতা-কর্মীরা। একই স্থানে মহিলা জামায়াতের নারীকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে তারা সড়কের ওপর বসে অবরোধ করে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা আব্দুল মতিন, আমঝুপি ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল জাব্বার। মজিবনগরের গৌরিনগরে সাবেক এমপি মাসুদ অরুন ও মুজিবনগর উপজেলা জামায়াতের আমির মশিউর রহমানের নেতৃত্বে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। অন্যদিকে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে বন্দরের মোড়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে ১৮ দলের কর্মীরা লাটিসোর্টা নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। এছাড়া কাথুলীর কায়েমকাটার মোড়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে ১৮ দলীয় নেতাকর্মী। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।
অবরোধের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। মেহেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনো অভ্যন্তরীন ও দূরপাল্লার যানবাহন ছেড়ে যায়নি। সামান্য পরিমাণে ছোট ছোট যান নসিমন, করিমন, আলগামন, অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করছে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, ১৮ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচি মোতাবকে গতকাল রোববার বিকেলে জীবননগর শহরে জামায়াত-শিবির বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভ মিছিলকালে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী রুহুল আমিনের পক্ষে শোডাউন করা হয়। শোডাউন ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে উপজেলা জামায়াত কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহসেক্রেটারি রুহুল আমিন। বিকেলে হাইস্কুল মসজিদের সামনে থেকে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জামায়াত-শিবিরের বিশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বাসস্ট্যান্ড দিয়ে দত্তনগর ও হাসপাতাল সড়ক হয়ে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির প্রভাষক খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি দামুড়হুদার হাউলী ইউপি চেয়ারম্যান মাও. আজিজুর রহমান। প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন জেলা জামায়াতের সহসেক্রেটারি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী রুহুল আমিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাও. মহিউদ্দিন।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জীবননগর উপজেলা সেক্রেটারি মাও. ইসরাইল হোসেন, সহসেক্রেটারি ইব্রাহিম খলিল, পৌর আমির মাও. সাজেদুর রহমান, সেক্রেটারি গোলাম রসুল, আন্দুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাখাওয়াৎ হোসেন, হাসাদাহ ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, উথলী ইউনিয়ন আমির আশাবুল হক, সীমান্ত ইউনিয়ন আমির আতিয়ার রহমান, হাসাদাহ ইউনিয়ন আমির কামালউদ্দিন, রায়পুর ইউনিয়ন আমির মাও. সাইদুর রহমান, উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ, সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, পৌর সভাপতি ফিরোজ হোসেন, সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান, হাফিজুর রহমান প্রমুখ।
আমঝুপি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে আমঝুপি এআরবি কলেজ মোড় থেকে বারাদীবাজার পর্যন্ত সড়কটি গতকাল রোববার ২য় দিনের মতো অবরোধ করে রাখে অবরোধকারীরা। ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা সকাল ৬টা থেকে বেলা ৯টা পর্যন্ত অবরোধের পাশাপাশি বিক্ষোভ মিছিল করে রাস্তা অবরোধ করে রাখে।