মিথ্যা পরিচয়ে আবাসিক হোটেলের কক্ষ পাওয়ার সুযোগ যেমন অপরাধমূলক নানা অপকর্মকে উসকে দেয়, তেমনই ভুয়া পরিচয়ে বাসাবাড়ি ভাড়া নেয়ার সুযোগেও বহু অপরাধী আইনের চোখ এড়িয়ে আত্মগোপন করে থাকার সুযোগ পায়। ওরা অপরাধমূলক অপকর্ম করে আবারও ছদ্মবেশে আড়ালও হয়ে যায়। ফলে আবাসিক হোটেলে প্রকৃত পরিচয়ে কক্ষ পেতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানোর বিষয়টি যেমন বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে, তেমনই বাসাবাড়ি ভাড়ায় নেয়ার ক্ষেত্রেও অভিন্ন নিয়ম মেনে সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশনা রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষ থেকে নারীর লাশ উদ্ধারের পর প্রথম যে প্রশ্নটি উঠেছে, তা হলে স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়ে হোটেলের কক্ষে উঠলেও ওদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং ছবি কেন সংরক্ষণ করা হলো না?
অপরাধমূলক ঘটনার পর হোতাকে ধরতে হয়রানির আগে নিয়ম মানতে বাধ্য করতে পারলে অপরাধ প্রবণতা যে বহুলাংশে হ্রাস পাবে তা বলার অবকাশ রাখে না। সকল প্রকার অপ্রতুলতা কাটিয়ে দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম পুলিশ বাহিনী গঠনে বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় কমতি নেই। সুদ্ধি অভিযানের আগে ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। যার সুফল ইতোমধ্যে কিছুটা হলেও সাধারণ মানুষ পাওয়া শুরু করেছে। যদিও ছুতো নাতায় ধরে বড় মামলায় গ্রেফতার দেখানোর হুমকি দিয়ে কিংবা চাঞ্চল্যকর কোনো মামলার আসামির বিরুদ্ধে দুর্বল অভিযোগপত্র পেশের প্রতিশ্রুতিতে উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ বা অপবাদ থেকে এখনও পুলিশের বহু সদস্যই বের হতে পারেননি। ফলে আস্থাহীনতা কাটিয়ে ওঠার পথ এখনও যে দুর্গম তা বলাই বাহুল্য। আবাসিক হোটেলের কক্ষ ভাড়া দিতে হলে কিছু নিয়ম মানতে হয়, সেই নিয়ম না মানা মানে অবশ্যই অপরাধীকে সহযোগিতা করা।
অবশ্যই পুলিশই নিরাপত্তার ভরসাস্থল। পুলিশই পারে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করতে, পুলিশের পক্ষেই সম্ভব নিয়মের সুবাতাসে সুন্দর সমাজ গঠনের পথ সুগম করতে। পুলিশ পারে, পুলিশ পারে না, কখন পারে, কখন না পারার প্রসঙ্গটা সামনে আসে তা নিয়ে বিতর্ক আছে বিস্তর। অবশ্যই পুলিশকে পারতে হবে। প্রতিটি আবাসিক হোটেলে, প্রতিটি ভাড়ার বাড়ির ভাড়াটে সম্পর্কে যে তথ্য যেমনভাবে সংরক্ষণসহ পুলিশকে অবহিত করার বিধান রয়েছে তা যদি ঠিক তেমনভাবে হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মাঝে মাঝে অভিযানে নামলে এবং অনিয়ম পেলে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে বড় ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটবে কি? অপরাধীর অপরাধের সুযোগ রেখে হয়রানি হওয়ার বদলে যে সমাজ ওই সুযোগ বন্ধ করতে পেরেছে সেই সমাজই পৌঁছেছে সাফল্যের ঈর্ষণীয় বা প্রত্যাশিত পর্যায়ে।