চুয়াডাঙ্গায় দু’দিনব্যাপী ‘এপার বাংলা ওপার বাংলা’ সাহিত্য সম্মেলন
স্টাফ রিপোর্টার: সাঙ্গ হলো দুই বাংলার কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলা। চুয়াডাঙ্গার মাটিকে আরও সমৃদ্ধ করে করে গেলেন বাংলাদেশের সাহিত্যিক ও কবি আনোয়ারা সৈয়দ হক, ভারতের প্রখ্যাত কথাশিল্পী আবুল বাশারের মতো গুণিজনেরা। এদের সাথে ছিলেন কবি মাকিদ হায়দার, কথাশিল্পী নাসরীন জাহান, কবি নন্দদুলাল আচার্য, গল্পকার ও নাট্যকার আশীস চট্টোপাধ্যায়, কবি ফরিদ আহমদ দুলাল, গল্পকার ও কবি পার্থ আচার্য ও কবি আশরাফ আহমদ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সফল সমাপ্তি ঘটলো চুয়াডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত ‘এপার বাংলা ওপার বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের’। চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে শনি ও রোববার দু’দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় ‘এপার বাংলা ওপার বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের’। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকে আসেন কবি-সাহিত্যিকরা। আসেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের লিখিয়ে বন্ধুরাও। সম্মেলন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের সাহিত্যিক ও কবি আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং ভারতের প্রখ্যাত কথাশিল্পী আবুল বাশার। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। সম্মেলনের স্লেøাগান ছিলো ‘এসো শিল্পের আগুনে পুড়ে শুদ্ধ হই, দ্বিধা আর জড়তা ভেঙে মুক্ত হই’।
সম্মেলনে আসা সিলেট সাহিত্য পরিষদের সভাপতি পুলিন রায় বললেন, চুয়াডাঙ্গার সাহিত্য সম্মেলনে এসে কবি-সাহিত্যিকদের যে প্রাণঘন আবেগ দেখতে পেলাম। তাতে আমি বিমোহিত। চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ এতো বড় আয়োজন যে সুনিপুন হাতে সম্পন্ন করছে তা দেখে আমি পুলকিত হলাম।
কবি ফরিদ আহমদ দুলাল বলেন, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ যে আয়োজন করেছে, এরকম আয়োজন পর্যায়ক্রমে সারাদেশে করা গেলে এক সময় দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর করা যাবে।
কবি মাকিদ হায়দার বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গায় না এলে বুঝতাম না এরকম একটি মফস্বল শহরে এতো আন্তরিকতার সাথে এ ধরনের আয়োজন করা যায়। সারাদেশ থেকে আসা কবি-সাহিত্যিকরা চুয়াডাঙ্গায় এসে তাদের লেখা পাঠ করছে। এ থেকে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য কল্যাণকর কিছু অবশ্যই পাবে।
দু’দেশের আমন্ত্রিত কবি-সাহিত্যিকরা বলেন, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের শিল্প-সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। আমরা চুয়াডাঙ্গায় এসে এর অনেক নমুনা দেখতে পেয়েছি।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকগণের সাথে ওপার বাংলার কবি-সাহিত্যিদের এই মিলনমেলার মাধ্যমে পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করবে, নান্দনিক ও মানবিক সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রকে বিকশিত করবে। এ সম্মেলন সীমারেখার প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মতো স্বাধীন সত্ত্বার প্রজ্জ্বলিত দীপশিখা ছড়িয়ে দেবে। প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক সাহিত্য চর্চা ও আন্তর্জাতিকতা বোধকে জাগ্রত করতে সহায়ক হবে।
সম্মেলনের শেষদিনে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা পর্বে ‘সমকালীন বাংলা সাহিত্য চর্চা, সমস্যা ও সম্ভাবনা’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রশিদ। উপস্থাপিত প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বাংলাদেশের সাহিত্যিক ও কবি আনোয়ারা সৈয়দ হক, ভারতের প্রখ্যাত কথাশিল্পী আবুল বাশার, কবি মাকিদ হায়দার, কথাশিল্পী নাসরীন জাহান, কবি নন্দদুলাল আচার্য, গল্পকার ও নাট্যকার আশীস চট্টোপাধ্যায়, কবি ফরিদ আহমদ দুলাল, গল্পকার ও কবি পার্থ আচার্য, কবি আশরাফ আহমদ, সহকারী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফ, ড. গাজী রহমান- মেহেরপুর, অধ্যক্ষ তপঙ্কর চক্রবর্তী- বরিশাল ও কবি সহিদুল ইসলাম- ঠাকুরগাঁও।
গতকাল রোববার সারাদিনই ফাঁকে ফাঁকে চলে আমন্ত্রিত কবিদের লেখা পাঠ। সবশেষে সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের ৪০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাহিত্য প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার বিতরণের পর বাংলাদেশ ও ভারত থেকে আসা আমন্ত্রিত অতিথিদের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেয়া হয়। যাদের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেয়া হয় তারা হলেন- ভারত থেকে আগত প্রখ্যাত কথাশিল্পী আবুল বাশার, কবি নন্দদুলাল আচার্য, কবি মিহির বন্দোপাধ্যায়, কবি আশীস বন্দোপাধ্যায়, লোকসঙ্গীত শিল্পী দীপা ব্রহ্ম, কবি তারেক কাজী, কবি অভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, গল্পকার অনিদ্য সান্যাল, গল্পকার ও কবি পার্থ আচার্য, কবি অঙ্কন বাশার, কবি পঞ্চতপা এবং বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি কথা সাহিত্যিক ও কবি আনোয়ারা সৈয়দ হক, কবি মাকিদ হায়দার, কথা সাহিত্যিক নাসরীন জাহান, কবি ফরিদ আহমেদ দুলাল ও কবি আশরাফ আহমদ। এছাড়াও অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বের অতিথিদের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেয়া হয়। শেষে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে আসা আমন্ত্রিত অতিথিদের অংশগ্রহণে কবিতা পাঠের আসর অনুষ্ঠিত হয়। পরে চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমি, উদীচী, আব্দুল লতিফ শাহ ও তার দল এবং ভারত থেকে আসা প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী দীপা ব্রহ্ম’র মনোজ্ঞ সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ঘটে সফল সমাপ্তি।
দু’দিনের এ সম্মেলনে ছিলো উদ্বোধন পর্ব, শোভাযাত্রা, আলোচনা পর্ব, কবিতা পাঠের আসর, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান, আবৃত্তি, বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত সাহিত্য প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিরা। চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন দু’দিনের এ সম্মেলনের সমাপ্তি টানেন।
দু’দিনব্যাপী এ বর্ণাঢ্য আয়োজনের বিভিন্ন পর্বে সঞ্চালনা করেন জেড আলম, মুন্সি আবু সাইফ, মনোয়ারা খুশি, হীরন উর রশীদ শান্ত ও সৌমজিতা শ্রুতি।