ইন্টারনেট বন্ধের আগেই আইসিটি প্রশ্নফাঁস : অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার: প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর সময় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হলেও তার আগেই ইন্টারনেটে বিভিন্ন ফেসবুক ও মেসেঞ্জার গ্রুপে চলে এসেছে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন। এসএসসিতে রোববার ছিলো ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিষয়ের পরীক্ষা। সকাল ১০টায় এ পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে উত্তরসহ ‘গ’ সেটের বহুনির্বাচনী প্রশ্ন দেয়া হয়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ওই একই প্রশ্ন ও উত্তরের ছবি বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে ছড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষা শেষে ভাইরাল হওয়া প্রশ্নের সাথে পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন হুবহু মিলে যায়। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অপরদিকে, এসএসসিতে প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে আগামী সবগুলো পরীক্ষার সকালে আড়াই ঘণ্টা ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে রাখতে সব আইএসপি ও মোবাইল অপারেটরদের নির্দেশনা দিয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এর অংশ হিসেবে গতকাল রোববার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আধা ঘণ্টা পরীক্ষামূলকভাবে দেশের সব ইন্টারনেট প্রোভাইডারের ব্যান্ডউইথ প্রতি সেকেন্ড ২৫ কিলোবিটের মধ্যে সীমিত রাখা হয়। রোববার সকালে আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষা শুরুর সময় আধা ঘণ্টার বেশি সময় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখার পর বিটিআরসির এই নির্দেশনা এলো। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, গতকাল রোববার রাতে এবং আরও ১০ দিন নির্দিষ্ট সময়ে এই নির্দেশনা অনুসরণ করতে সব ধরনের আইএসপি, মোবাইল অপারেটর ও ওয়াইম্যাক্স অপারেটরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’ এর মধ্যে রোববার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার বিষয়টি হবে পরীক্ষামূলক। আর বাকি দশ দিনের বিষয়টি কার্যকর হবে পরীক্ষা শুরুর সময় ধরে।
গত কয়েক বছর ধরেই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। অথচ শিক্ষামন্ত্রণালয় এ বিষয়টিকে আমলেই আনেনি। বরং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের খবর প্রকাশ হলে মন্ত্রণালয় তা অতিরঞ্জিত বলে উড়িয়ে দিতো। তবে এবার প্রথমবারের মতো প্রশ্নফাঁসকারীর তথ্য দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে পরীক্ষা বাতিল হবে কি না। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ মিললে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের কথাও জানান।
এবার প্রথম পরীক্ষা ছিলো বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা। এ দিন পরীক্ষার ২৪ মিনিট আগে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। দ্বিতীয় দিন ৪৫ মিনিট আগে প্রশ্ন পাওয়া যায় ফেসবুকে। পরে ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্ন ছড়িয়ে দেয়া হয় হোয়াটসঅ্যাপে পরীক্ষার দু ঘন্টা আগে। ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই সকাল ৯টা ২০ মিনিট থেকে ৯টা ২৪ মিনিটের মধ্যে একাধিক ফেসবুক গ্রুপে ‘খ’ সেট এর প্রশ্ন ফাঁস হয়। ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয় পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে। প্রশ্নফাঁসের ধারাবাহিকতায় গণিতের প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়।
এদিকে, ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীতে আমান উল্লাহ, বরকত উল্লাহ, আহসান উল্লাহ নামে তিন সহোদরসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, তিন ভাইয়ের বাড়ি চাঁদপুর, থাকত রাজধানীর ইন্দিরা রোডের একটি বাসায়। এসএসসি পরীক্ষা শুরুর কয়েক দিন আগে এই তিন ভাই ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘোষণা দেন। গ্রেফতার হওয়া অন্য ১১ জন হলেন- রাহাত ইসলাম, সালাউদ্দিন, সুজন, জাহিদ হোসেন, সুফল রায় ওরফে শাওন, আল আমিন, সাইদুল ইসলাম, আবির ইসলাম, শাহাদত হোসেন, ফাহিম ইসলাম ও তাহসিব রহমান। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গত শনিবার তাদের গ্রেফতার করে ডিবির উত্তর বিভাগ। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, ২৩টি মোবাইলফোন ও নগদ ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গতকাল রোববার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান ডিবির যুগ্মকমিশনার আবদুল বাতেন। আবদুল বাতেন আরও বলেন, তিন ভাইয়ের মধ্যে আমান উল্লাহ সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র। তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে কক্ষে যাওয়ার সময়ে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আগে কোনো ‘দুষ্টু’ লোক মোবাইলে ছবি তুলে গ্রুপগুলোয় ছেড়ে দেয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা বোর্ডের কারও সম্পৃক্ততা এ পর্যন্ত তদন্তে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে প্রশ্নফাঁস মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, প্রশ্নফাঁসের তথ্য পাওয়া গেছে, পরীক্ষা বাতিল করা হবে কি না তা শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রশ্নফাঁস মূল্যায়ন কমিটির জরুরি সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, যেসব ফেসবুক লিঙ্ক, টেলিফোন নম্বরসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন আদান-প্রদান হয়েছে সেগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আওতায় চলে এসেছে। দ্রুত তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।