জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় আজ : সবার চোখ আদালতে

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল
স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় ঘিরে আওয়ামী-বিএনপির রাজপথ দখলে রাখার পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জের মুখে সংঘাত-সহিংসতা ও নাশকতার আশঙ্কায় সারাদেশের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ জোরদার করা হয়েছে। আজ ভোর থেকে র‌্যাব, পুলিশ এবং আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৮০ হাজার সদস্য রণসাজে মাঠে নামছে। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে মাঠে নামাতে আরও প্রায় ১০ হাজার ফোর্স স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বুধবার থেকেই বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সচিবালয় ও সংসদ ভবনসহ দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় (কেপিআই) তিনস্তরের নিরাপত্তা বেস্টনীতে ঘেরা থাকছে। কেপিআইমুখী বেশকিছু রাস্তাতে যানবাহন ও জনগণের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা।
অপরদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘিরে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, তিনি কোনো দুর্নীতি করেননি। ন্যায়বিচার হলে তিনি বেকসুর খালাস পাবেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে আজ বৃহস্পতিবার। এ রায়কে ঘিরে দেশব্যাপী রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। রায় নিয়ে জনমনে চলছে নানা আলোচনা।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে চলা জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ। এ মামলায় প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এদিকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা মহানগর এলাকায় যাতে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী কিংবা ভাড়াটে কোনো নাশকতাকারী কোনোভাবে ঢুকতে না পারে এজন্য রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে। যা আজ ভোর থেকে আরও জোরদার করা হবে। এছাড়াও ঢাকামুখী সব দূরপাল্লার যানবাহনে পথে পথে তল্লাশি করা হচ্ছে। যা আগামী শনিবার পর্যন্ত চলমান থাকবে বলে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বাসা-বাড়ি, ছাত্রাবাস, মেস কিংবা আবাসিক মাদরাসাগুলোতে যাতে বহিরাগত কোনো পলিটিক্যাল ক্যাডার আশ্রয় নিয়ে রাজপথের আন্দোলনে যোগ দিতে না পারে এজন্য ওইসব স্থানে র‌্যাব-পুলিশ ধারাবাহিক তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। সন্দেহজনক কাউকে পাওয়ামাত্র তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। যা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।
বিজিবির গণসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রেজা জানান, জেলা প্রশাসনের অনুরোধে ঢাকাসহ সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, ঢাকায় ২০ প্লাটুন, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়াসহ ৪৮ জেলায় ১৩৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিজিবি সদস্যরা সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের আরও বিভিন্ন স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হতে পারে।
এদিকে, রাজপথ দখলে বিএনপি-আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাজ সাজ প্রস্তুতিতে ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষের উৎকণ্ঠার পারদ চরমে গিয়ে ঠেকেছে। এর পাশাপাশি পথে পথে পণ্যবাহী যানবাহনে তল্লাশি ও গণপরিবহনের যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঢাকামুখী হওয়ার প্রবণতা একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে গোটা দেশ থেকে ঢাকা পরোক্ষভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন সূত্রগুলো বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছে, বুধবার ভোর থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কাঁচা বাজারের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর দর্শনা পৌর আ.লীগের কার্যালয় থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান শহর প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিক্ষোভ সমাবেশ। খালেদা জিয়ার শাস্তির দাবি তুলে সমাবেশে বক্তব্য দেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম, দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি হাজি জয়নাল আবেদীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী, আ.লীগ নেতা আলী মুনসুর বাবু, দামুড়হুদা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আ. হান্নান ছোট, সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী, দর্শনা পৌর যুবলীগের সভাপতি আশরাফ আলম বাবু, সাধারণ সম্পাদক শেখ আসলাম আলী তোতা, যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মতি, মামুন খান, সোলায়মান কবির প্রমুখ।
বাড়াদী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার বাড়াদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মোটরসাইকেল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন মাস্টারের নেতৃত্বে প্রায় কয়েক শত মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়াদী ইউনিয় প্রদক্ষিণ করে। এ সময় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ইউনিয়নের কৃষকলীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ স্বপন ও শামীম সচেতনমূলক বক্তব্য দেন। ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদন তরিকুল ইসলাম জুয়েল, ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মাস্টার ও হাসিবুল মেম্বার উপস্থিত ছিলেন।
আসমানখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার আসমানখালী বাজারে গাংনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নাশকতা প্রতিরোধে আলোচনাসভা ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ৪ টার দিকে আসমানখালী বাজারে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বজলুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক, তহিদুল ইসলাম ফকা, রকিবুল হাসান, হাফিজুর রহমান লাভলু প্রমুখ।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে সম্ভাব্য নাশকতার প্রতিবাদে মেহেরপুর গাংনীতে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ থেকে বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথে চ্যালেঞ্জ করা হয়।
বিকেল ৫টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকনের নেতৃত্বে বাসস্ট্যা- থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাসস্ট্যা-ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বাবু, উপজেলা যুবলীগের সহ সভাপতি ভারপ্রাপ্ত মেয়র নবীর উদ্দীন, উপজেলা আ.লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আহসান উল্লাহ মোহন, কাথুলী ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি গোলজার হোসেন, মটমুড়া ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি আবুল হাসেম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারি, বামন্দী ইউনিয়ন আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক কোমল ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ আহ্বায়ক আবুল বাসারসহ নেতৃবৃন্দ। রায়কে ঘিরে যেকোনো প্রকার নাশকতা রুখে দেয়ার ঘোষণা দেন উপজেলা আ.লীগ সভাপতি।
এদিকে, সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে উপজেলা যুবলীগের কার্যালয় থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শুরুর স্থানে ফিরে শেষ হয়। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মজিরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, সহ সভাপতি আল ফারুক, পৌর যুবলীগ সহ সভাপতি আশিকুর রহমান আকাশ, যুবলীগ নেতা সাইফুজ্জামান সিপু, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তোহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেন, কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসিব ও উপজেলা তাঁতিলীগের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলামসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ।
ডাকবাংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়নে বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় উপলক্ষে বিএনপি কোনোরকম নাশকতা করতে না পারে সেই জন্য ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ প্রস্তুতিসভার আয়াজন করে। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টায় ডাকবাংলা আওয়ামী লীগের অফিসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাধুহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল ম-ল। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নাজীর উদ্দীন। উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল, যুবলীগের সভাপতি রাজীব শেখ, সাধারণ সম্পাদক শকুর আলী, আওয়ামীলীগের অন্যতম নেতা আনিচুর রহমান বাবলু, নুরুল ইসলাম, আনিছ, আইয়ুব আলী, দুলাল ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকগণ।