স্টাফ রিপোর্টার: তেলবহন করা ট্যাঙ্কলরির নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হানুরবাড়াদি বসতিপাড়ার কালু (২৮)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের চুড়ামনকাটি নামকস্থানে ট্যাঙ্কলরিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা মেরে উল্টে পড়ে। এর নিচে চাপা পড়ে নিহত কালুর মৃতদেহ লরির কিছু অংশ কেটে উদ্ধার করে যশোর ফায়ার স্টেশন ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা। চালক দৌলাতদিয়াড় কোরিয়াপাড়ার ইছামুল ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত সরে পড়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
যশোর থেকে নুরুজ্জামান বাপী জানান, যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের চুড়ামনকাটিতে একটি ট্যাঙ্কলরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে গাছে ধাক্কা দিয়ে উল্টে যায়। লরির নিচে চাপা পড়ে মারা যান চালকের অথবা তার পাশের আসনে থাকা এক ব্যক্তি। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাকে উদ্ধার করেছেন গাড়ি কেটে। পরে মরদেহ নিয়ে গেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বারোবাজার হাইওয়ে ফাঁড়ি পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যের একটু আগে ট্যাঙ্কলরিটি (খুলনা ট-১৫২৮) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চুড়ামনকাটি কলোনিপাড়ার কাছে প্রথমে সড়কের ধারের একটি গাছে ধাক্কা দিলে উল্টে যায়। ট্যাঙ্কলরিটি খুলনার দৌলতপুর ডিপো থেকে চুয়াডাঙ্গার মেসার্স ইউসুফ আলী এজেন্সির জ্বালানিতেল নিয়ে চুয়াডাঙ্গা যাচ্ছিলো। ফায়ার সার্ভিস যশোরের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, ট্যাঙ্কলরি উল্টে যাওয়ার খবর পেয়ে তারা দুর্ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, উল্টে যাওয়া গাড়ির নিচে চাপা পড়ে আছেন একজন। প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা কাটারি দিয়ে গাড়ির অংশবিশেষ কেটে উদ্ধার করেন ওই হতভাগ্যের মরদেহ। যশোর কোতয়ালী থানার এসআই ওয়াহেদুজ্জামান সুবর্ণভূমিকে জানান, তারা মরদেহ উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করেন।
রাত সাতটার সময় ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীরা গাড়ি কেটে মরদেহ বের করে আনেন। তখনই তা নিজেদের হেফাজতে নেন বারোবাজার হাইওয়ে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই কালিপদ পোদ্দার। খুলনার জ্বালানিতেলের ডিপো ইনচার্জ এসএম তসলিম বারী বাবু জানান, ওই গাড়িটির মালিক চুয়াডাঙ্গার একজন জ্বালানিতেল ব্যবসায়ী। আজ ট্যাঙ্কলরিটি খুলনা থেকে নয় হাজার লিটার তেল নিয়ে চুয়াডাঙ্গা ফিরছিলো। দেশের জ্বালানিতেলের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী করিম গ্রুপের এক কর্মচারী আব্দার হোসেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে চুড়ামনকাটি গিয়েছিলেন। তিনি সুবর্ণভূমিকে জানান, ট্যাঙ্কলরিটির মালিক চুয়াডাঙ্গার জনৈক গেন্দু মিয়ার মেজ ছেলে বাবুর। তার কয়েকটি ফুয়েল প স্টেশন আছে বলে জানান আব্দার। এদিকে, দুর্ঘটনাস্থলে গাড়ির নিচে মরদেহ থাকার সংবাদে আশপাশের বহু মানুষ ছুটে আসেন চুড়ামনকাটি কলোনিপাড়ায়। এসময় যশোর-কালীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাচলের গতি ধীর হয়ে যায়।
এদিকে আমাদের ডিঙ্গেদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নিহত কালু চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের হানুরবাড়াদী বসতিপাড়ার মৃত মুনছার আলীর ছেলে। চুয়াডাঙ্গার গেন্দু মিয়ার মেজ ছেলে বাবুর ডিঙ্গেদহের নিকটবর্তী তেলের পাম্পের তেলবাহি ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করতো। মাসখানেক আগে ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ নেয়। ঝিনাইদহ মহাসড়কের যশোর নয়মাইলের নিকট পৌঁছুলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাম দিকে গাছের সাথে ধাক্কা মারলে তেলবাহি ট্রাকের সামনের অংশ গাছের সাথে দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ সময় ট্রাকের ড্রাইভার ট্রাকের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লে ও হেলপার কালু ঘটনাস্থলে মর্মার্ন্তিকভাবে নিহত হন। নিহত কালু গাড়াবাড়িয়া গ্রামের জামাই। তার এক সন্তান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বাইসাইকেলযোগে সে চুরিমালা ফেরি করতো। মাসখানেক আগে সে ট্রাঙ্কলরির চালকের হেলপার হিসেসে কাজ নেয়। অবশেষে লাশ হলো সে। গতরাতে তার মৃতদেহ নিজ বাড়িতে নেয়ার প্রক্রিয়া করা হয়। তবে আইনগত জটিলতার কারণে আজ মৃতদেহ তার বাড়ি নিয়ে দাফন করা হতে পারে। তবে তা কখন নাগাদ তা সম্পন্ন করা সম্ভব হবে তা গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ছিলো অনিশ্চয়তার মধ্যে।
এদিকে দুর্ঘটনার পর ট্যাঙ্কলরি ফেলে চুয়াডাঙ্গায় ফিরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চালক ইছামুল। তিনি দৌলাতদিয়াড় কোরিয়াপাড়ার মৃত ফটিক ম-লের ছেলে। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, খুলনার ডিপো থেকে তেল নিয়ে ফিরছিলাম। যশোর চুড়ামনকাঠির নিকট এক্সসেল ভেঙে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। দ্রুত দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ি। শেষ পর্যন্ত কি হয়েছে তা বলতে পারবো না।