মাথাভাঙ্গা মনিটর: চলে গেলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। কালো মানুষের মুক্তির দেবতা, আফ্রিকার যীশু- ইত্যাদি নানা বিশেষণ সঙ্গী করে। এ মৃত্যু আরো আগেই নির্ধারিত ছিলো তার জন্য, যা তুমুল সাহসে বরণ করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েই বরং দীর্ঘায়িত করেছেন।
কাঠগড়ায় সেই সাহসী উচ্চারণ: আমি মরতে প্রস্তুত (আই অ্যাম প্রিপেয়ার্ড টু ডাই) আজ বিপ্লবের ম্যানিফেস্টো হয়ে গেছে; ঠাঁই নিয়েছে দেশমুক্তির সংগ্রামে নামা প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার মননে। ১৯৬৪ সালের জুন মাস। ‘রিভোনিয়া ট্রায়াল’ নামে সেই কুখ্যাত বিচার প্রহসনের দ্বিতীয় বছর চলছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার ম্যান্ডেলাসহ ‘আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস’র ১৯ জন নেতাকর্মীকে অন্তর্ঘাতসহ নানা দেশদ্রোহী অপরাধে অভিযুক্ত করে বিচার চালাচ্ছে। চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে এ বিচার যখন শুরু হয় তার আগেই ম্যান্ডেলা অন্য একটি অপরাধে পাঁচ বছরের কারাবাসে, সেটি সেই মেয়াদে তৃতীয় বছর! রায় যে মৃত্যুদণ্ড- এটা তখন আফ্রিকার দুধের শিশুটিরও জানা হয়ে গেছে। আত্মপক্ষ সমর্থনে যখন ম্যান্ডেলার পালা এলো তখন তিনি কোনো আইনজীবির শরণ নিলেন না; বরং আত্মপক্ষ সমর্থনে পড়লেন হাতে লেখা এক বিবৃতি। কিংবা এটাকে বক্তৃতা বলাই ভালো। ১৭৬ মিনিট ধরে সে ভাষণ স্তম্ভিত হয়ে শুনে গেছে আদালত। সেই অসামান্য ভাষণের শেষ অনুচ্ছেদটুকু রাজনৈতিক বক্তৃতার সারিতে ধ্রূপদী মর্যাদায় আসীন। যার ভাবানুবাদ এরকম- গোটা জীবনটা আমি উৎসর্গ করেছি আফ্রিকার মানুষের মুক্তি সংগ্রামে। আমি শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়েছি এবং লড়েছি কৃষ্ণাঙ্গ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধেও। আমি লালন করি সেই গণতান্ত্রিক ও মুক্ত সমাজের স্বপ্ন, যেখানে সবাই শান্তি ও সৌহার্দে থাকবে এবং কোনো বৈষম্য থাকবে না। এ আদর্শকে আমি অর্জনে রূপ দেয়ার ইচ্ছা রাখি। কিন্তু যদি প্রয়োজন হয়, তবে এ আদর্শের জন্য আমি মরতেও প্রস্তুত। মৃত্যু এসে ফিরে গিয়েছিলো সেবার। তবে এ আগুনকে মুক্ত রাখার সাহস হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের। ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান নেলসন ম্যান্ডেলা। তার আগে কারাগারে কেটেছে তার ২৭ বছর ৮ মাস।