শাশুড়ির শয্যাপাশে থাকা পুত্রবধূর নাজেহাল চিত্র : ছোটাছুটি করেও প্রতিকার না পেয়ে দীর্ঘশ্বাস
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগীর ওষুধ কিনে ফেরার সময় স্বেচ্ছাসেবীর বাধারমুখে পড়া পুত্রবধূ কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না শান্তনা। তার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাশুড়ি সালমা খাতুনের (৪৫) মৃত্যুর জন্য তিনি শুধু ওই স্বেচ্ছাসেবীর বাধাকেই দায়ী করেননি, তিনি সেবিকার বিরুদ্ধেও কর্তব্য অবহেলার অভিযোগ তুলে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন। শুধু পুত্রবধূ নয়, ঘটনার বর্ণনা শুনে নিকটজনেরাও স্বেচ্ছাসেবীসহ সেবিকা এবং চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন। উত্তেজনা দানা বাঁধে। ঘটনাটি ঘটে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীসহ মারা যাওয়া রোগীর নিকটজনেরা বলেছেন, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার পেয়ারাতলার রেজউল হকের স্ত্রী সালমা খাতুন গতপরশু বুধবার সন্ধ্যায় বুকে ব্যথা অনুভব করেন। তাকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে নেন। ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে রাখা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা আনুমানিক সোয়া ১১টার দিকে সেবিকা একটি ওষুধ বাইরে থেকে কেনার জন্য চিরকুট ধরিয়ে দেন। রোগীর পাশে থাকা পুত্রবধূ সুমি তার শাশুড়িকে বিছানায় রেখে ওষুধ কিনতে বাইরে যান। ওষুধ কিনে দ্রুত শাশুড়ির শয্যাপাশে ফেরার চেষ্টা করতে গেলে স্বেচ্ছাসেবক বুলু বাধা দেন। বলেন, চিকিৎসক এখন ভিজিটে রয়েছেন রোগীর কাছে যাওয়া যাবে না। রোগীর পাশে আর কেউ নেই। জরুরি ওষুধ কিনতে গিয়েছিলাম বলে সুমি ওষুধ দেখিয়েও স্বেচ্ছাসেবী বুলু’র বাধা সরাতে না পেরে শুরু করে চিৎকার। সুমি তার শাশুড়ির শয্যাপাশে যাওয়ার সুযোগ পান ঠিকই, তবে ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। শাশুড়ির পাশে পৌঁছে নিস্তেজ শাশুড়ির শরীরে ওই ওষুধ প্রয়োগের জন্য সেবিকাকে বার বার অনুরোধ করেও যেমন সাড়া পাননি, তেমনই চিকিৎসককে ডাকার জন্য বলেও কোনে লাভ করতে পারেননি। জরুরি ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসক ডাকতে গেলে সেখান থেকে বলা হয়, ভেতরে বড় ডাক্তার আছে। ওই ডাক্তারই দেখবেন। ছোটাছুটির একপর্যায়ে রোগীর পাশে পৌঁছান ভিজিটে থাকা হৃদরোগ ও মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. পরিতোষ কুমার ঘোষ। তিনি রোগী সালমা খাতুনকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন।
রোগীর পাশে থেকে পুত্রবধূ সুমির এ নাজেহাল পরিস্থিতির বর্ণনা শোনার পর তার নিকটজনেরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাসপাতালেই কর্তব্যরত পুলিশদল সেখানে অবস্থান নেয়। শেষ পর্যন্ত অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও সুমিসহ তার নিকটজনেরা মৃতদেহ নেয়ার সময় মৌখিকভাবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী বুলু’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, চিকিৎসক যখন ভিজিটে থাকেন তখন রোগীর অতিরিক্ত লোকজন ভেতরে থাকা বারণ। এ কারণেই বাধা দেয়া হয়েছিলো। তবে রোগীর জন্য ওষুধ আনার কথা যখন বলেছিলেন তখন তো আর বাধা দেয়া হয়নি। সেবিকা বলেছেন, ভিজিটে চিকিৎসক ছিলেন। চিকিৎসক বলেছেন, রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনকই ছিলো। ভিজিটের একপর্যায়ে রোগী যখন দেখলাম তখন রোগী মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়েছে।