দামুড়হুদার বোয়ালমারি নটিবাড়ি মাঠের জলাবদ্ধতা রোধে ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগ গ্রহণ
বখতিয়ার হোসেন বকুল: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদাহ ইউনিয়নের বোয়ালমারি-জগন্নাথপুরের কোলঘেষেই রয়েছে ভৈরব নদ। নদটি বোয়ালমারি-জগন্নাথপুর হয়ে চলে গেছে পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর জেলায়। প্রায় শত বছর আগে ওই ভৈরব নদ দিয়েই চলাচল করতো বড় বড় নৌকা। ওই ভৈরব নদ দিয়েই ভারতের কোলকাতা থেকে নৌকাযোগে আসতেন এলাকার তৎকালীন জমিদার নফরপাল চৌধুরী। ওই ভৈরব নদ দিয়েই বোয়ালমারি¯’ নটিবাড়ি মাঠ হয়ে নাটুদাহ সদর পুকুরে আসার জন্য খাল খনন করেছিলেন জমিদার নফরপাল চৌধুরী। কারণ ওই সদর পুকুরেই ছিলো জমিদার নফরপাল চৌধুরীর বাসভবন। ওই ভৈরব নদের পাশেই তিনি গড়ে তুলে ছিলেন ৫তলা বিশিষ্ট বিশাল অট্রালিকা। ওই বহুতল ভবনের নাম দেয়া হয়েছিলো হাওয়া খানা। জমিদার নফরপাল চৌধুরী ওই অট্রালিকায় বসে অবসর সময় কাটাতেন। তিনি প্রজাদের মনোরঞ্জনের জন্য ওই ভৈরব নদের প্রায় ২শ’ গজ অদূরে গড়ে তুলেছিলেন বাইজিবাড়ি। পরবর্তীতে ওই বাইজিবাড়ির নাম দেয়া হয় নটিবাড়ি। সে অনুসারে ওই মাঠটির নাম নটিবাড়ির মাঠ রাখা হলেও পরবর্তীতে ওই মাঠের নাম নটিবাড়ি পরিবর্তন করে রাখা হয় খটিবাড়ি। কালের বিবর্তনে জমিদার নফরপাল চৌধুরীর সেই ৫তলা বিশিষ্ট বিশাল অট্রালিকা (হাওয়া খানা), বাইজিবাড়ি, বাসভবনসহ কোনো কিছুরই আর চিহ্নমাত্র নেই। জমিদার নফরপাল চৌধুরীর ম”ত্যুর পর একে একে বিলুপ্ত হতে থাকে তার বিভিন্ন স্থাপনা। পরবর্তীতে ওই খালটি ভরাট হয়ে ভৈরব নদের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে মাঠে জলাবদ্ধতার স”ষ্টি হয়ে প্রতিবছর প্রায় শতাধিক বিঘা জমির ফসল বিনষ্ট হতে থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে মাঠের চাষিরা। চাষিদের দুঃখ বিবেচনায় নিয়ে দামুড়হুদার নাটুদাহ ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ওই নটিবাড়ির মাঠের ভরাট হয়ে যাওয়া খালটি পুনঃখননের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি সম্প্রতি জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের নিদের্শনায় নিজ উদ্যোগে নটিবাড়ি মাঠের পানি নিষ্কাশনের লক্ষ্যে সম্প্রতি পুনঃখননের কাজ শুরু করেছেন। এ বিষয়ে নাটুদাহ ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, ওই খালটি প্রায় ৫০ বছর যাবত বেদখল ছিলো। খালটি ভরাট হয়ে মাঠে জলাবদ্ধার সৃষ্টি হতো। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় নিজ উদ্যোগে ১ জানুয়ারি থেকে পুনঃখনন কাজ শুরু করেছি। ড্রেজার দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। কাজ শেষ করতে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হবে। ওই খালের পাশ দিয়েই নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ২০ ফিট চওড়া রাস্তা। খালটির খনন কাজ শেষ হলে মাঠের জলাবদ্ধতা থাকবে না। ফলে বিনষ্টের হাত থেকে রক্ষা পাবে মাঠের ফসল। তিনি দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সুদ”ষ্টি কামনা করে আরও বলেন, পানি চলাচলের জন্য আপাতত পাইপ দেয়া হবে। তবে ওই ভৈরব নদের সাথে সংযোগস্থলে কালভার্ট নির্মাণ করা প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে নাটুদাহ ইউপি চেয়ারম্যানের ভূয়সী প্রশংসা করে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসান বলেন, মাঠের ফসল রক্ষার্থে খালটি পুনঃখননের প্রয়োজন ছিলো। ভালোভাবে কাজ শেষ করতে আমার সার্বিক সহযোগিতা থাকবে বলেও জানান তিনি। দামুড়হুদা উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী (দুর্যোগ) নুরুজ্জামান বলেন, ওই খাল পুনঃখনন কাজে কর্মসংস্থান-কর্মসূচির লেবারের প্রয়োজন হলে দেয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমেও চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করা হবে।