চুয়াডাঙ্গার দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পুল চালু অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট নিরসন ও লেখাপড়ার মানোন্নয়নে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিক্ষক পুল চালু করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১০টায় স্থানীয় ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে শিক্ষক পুল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জসিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদ, সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুল হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান। অনুষ্ঠানে এনএসআই উপপরিচালক আবু জাফর ইকবাল, জেলা পরিষদের সচিব নূরজাহান খানম, সদর উপজেলা এসি ল্যান্ড-সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুল আলম, সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার মালাকার, অধ্যক্ষ (অব.) এসএম ইস্রাফিল পুল শিক্ষকবৃন্দ, সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সভাপতি অ্যাড. রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সনিসহ ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে পড়াশোনার মান নিচে নেমে যাচ্ছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে চাহিদার অর্ধেক শিক্ষক রয়েছে। সরকারিভাবে শিক্ষক কবে নাগাদ নিয়োগ হবে তা জানা যায়নি। যে কারণে এ উদ্যোগ। পুলের ২০-২৫জন শিক্ষক বিনাখরচে পাঠদান করবেন। যশোর বোর্ডে ভি.জে স্কুল এক সময়ে সেরা দশের মধ্যে থাকলেও বর্তমানে সারাদেশের মধ্যে সর্বনি¤েœ ১২৮তম স্থানে অবস্থান করছে। স্কুলের শিক্ষকরা কোচিংয়ে শতভাগ জড়িত থাকবে না। শিক্ষকদের জোরদার সতর্ক করেছি। এ বছরে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষকরা মহান পেশায় আছেন, আপনাদের ডিউটি শিক্ষকতা। আপনাদের বেতন বেড়েছে সে অনুযায়ী পড়াশুনা করাবেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীর অনুপস্থিতির হার কমাতে সিসিটিভি ও ডিজিটাল হাজিরা স্থাপন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের গুণগত মান বাড়াতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করতে পারবে না। শিক্ষক বিষয়ভিত্তিক ক্লাস নেবেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো উপহার সামগ্রী নিতে পারবেন না। এনসিটিবির বই ছাড়া কোনো বই বিদ্যালয়ে ঢুকবে না। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের জন্য অভিভাবক সমাবেশ করা হবে। কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ফেল করলে পরবর্তী ক্লাসে প্রমোশন হবে না। তাকে টিসি দেয়া হবে। বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বিলিতে শিক্ষকদের উপস্থিত থাকতে হবে। শিক্ষকদের ল্যাপটপ কিনতে হবে। মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নিতে হবে। ল্যাংগুয়েজ, বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক কর্মকা- বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে এক স্কুলের খাতা অন্য স্কুলে মূল্যায়ন করা হবে। স্কুল ড্রেস কনফার্ম করতে হবে। শিগগিরই সদর উপজেলায় অভিভাবক সমাবেশ করে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সেমিনার করা হবে।’
পুল শিক্ষক ১৬জন হলেন, ইংরেজির গিয়াস উদ্দিন ও শওকত আলী, গণিতের আব্দুল জব্বার ও নরেশ চন্দ্র ভোমিক, বিজ্ঞান-গণিতের সাজেদা বেগম, সোহরাব আলী, জেলা পরিষদ সচিব নুরজাহান খানম, সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদ, এনএসআই উপপরিচালক আবু জাফর ইকবাল, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা প্রবীর কুমার বিশ্বাস, গণিত জাতীয় মহিলা সংস্থার আক্তারুজ্জামান, জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম, এনএসআই সহকারী পরিচালক তপু কুমার বিশ্বাস, সদর উপজেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, জেলা ড্রাগ সুপার সুকর্ণ আহমেদ ও ইংরেজির বনি আমিন।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার মালাকার জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক ও পরিচালক (খুলনা) বরাবর শিক্ষক সংকটের বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। বর্তমানে তার বিদ্যালয়ে দুই শিফটে ২ হাজার ১৪০জন ছাত্রী রয়েছে। শিক্ষক থাকার কথা ৫৩জন। অথচ বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছে ২৬জন। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে লেখাপড়ার মান উন্নত করা যাচ্ছে না। চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুল হোসেন জানান, ‘ভি.জে উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২ হাজার ২০০জন ছাত্র রয়েছে। স্কুলে ৫৩জন শিক্ষকের থাকার কথা থাকলে রয়েছে ৩১জন। ডাবল শিফট স্কুলে অর্ধেক পরিমাণ শিক্ষক থাকায় লেখাপড়ার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। পুল শিক্ষক নিয়োগে আশা করি আগামীতে ফলাফল ভালো হবে।’